জ,ই বুলবুল : ‘আমারে চকলেট খাওয়ার লাইগ্যা টেকা ও আম দেয়ার কথা কইয়া তার বাড়িত নিয়া মুখ গামছা দিয়া বাইন্দা নির্যাতন করেছে। তিন থাইক্যা চাইরবার তার বাড়িত নিছে, আর ইতা করছে। হে সময় বাড়িত কেউ আছিলো না। লিল মিয়া আমারে যা করছে, এই কথা কেউরে কইলে, চাক্কু দিয়া আমার গলা কাইট্টা দিবো- এমোন ভয় দেখাইছে, এর ল্যাইগা ডরে এই কথা আমি কেউরে কই নাই।’
চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে কথাগুলো বলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের ১১ বছরের প্রতিবন্ধী শিশু।
বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই শিশুটিকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে লিল মিয়ার (৫৫) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় গিয়ে প্রতিকার না পেয়ে গত ৩১ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে লিল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন শিশুটির বাবা মঙ্গল মিয়া। বিজ্ঞ ট্রাইবুনালের নির্দেশে ৭ জুন নবীনগর থানায় মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে অভিযুক্ত লিল মিয়া পলাতক রয়েছেন। এবং তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ আছে।
এদিকে পেশি শক্তি ও টাকার বিনিময়ে আসামিপক্ষ মামলাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, নির্যাতিতা শিশুটি সহজ সরল, অনেকটা প্রতিবন্ধী, তার সাথে যা হয়েছে তা ন্যাক্কারজনক। তার বাবা দরিদ্র হওয়ার কারণে, তাদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মেয়েটি ন্যায় বিচার পাবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
মামলার বাদি মঙ্গল মিয়া জানান, ভোলাচং গ্রামের বাসিন্দা লিল মিয়া তার গবাধি পশুর জন্য প্রতিদিনই আশপাশের বাড়ি থেকে ভাতের মাড় সংগ্রহ করেন। আমি তার প্রতিবেশি মতি মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকি। লিল মিয়া ভাতের মাড় সংগ্রহ করার সুযোগে আমার ১১ বছর বয়সের সহজ সরল মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে।
তিনি অভিযোগ করেন, চকলেট খাওয়ার টাকা ও আম দেয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। সর্বশেষ গত ২৭ মে বিকেলে ফাঁকা বাড়ি পেয়ে লিল মিয়া আমার মেয়ের মুখ চেপে ধরে নির্যাতন করার সময় চিৎকার শুনে আমরা গিয়ে ঘটনাস্থলে তাকে আটক করি। পরে তার বাড়ির লোকজন এসে আমাকে ও আমার ছেলে হাসানকে মারধর করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। আহত অবস্থায় হাসানকে নবীনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মাথায় সাতটি সেলাই লেগেছে। পরে ডাক্তারের কাগজ নিয়ে এই ঘটনায় নবীনগর থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ ধমক দিয়ে আমাকে থানা থেকে বের করে দেয়। এ সময় আমার মেয়েকে ধমক দিলে সে ভয়ে কোনো কথা বলতে পারে নাই। পুলিশ আমাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সাইন রেখেছে।
তিনি বলেন, এই গ্রামে ভাড়া থেকে দিন মজুরের কাজ করি। এখানে আমার আপনজন কেউ নেই, গ্রাম্য বিচারে ন্যায় বিচার পাব না, সে কারণে আমি আদালতে মামলা করেছি। মামলার তদন্ত সঠিকভাবে হবে কিনা বলতে পারছি না। মামলা করার পর থেকে পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছি।
জানা যায়, বিষয়টি সামাজিকভাবে মিমাংসা করতে স্থানীয় কাউন্সিলর ডা. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মতি মিয়ার বাড়িতে ২৯ মে সোমবার শালিস বসে। আহত হাসান সভায় উপস্থিত না থাকায় সভাটি বাতিল করে সাহেব সর্দারগণ চলে যায়। পরে নির্যাতিতার বাবা মঙ্গল মিয়া ৩১ মে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল নং ১ ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসী ও সাহেব সর্দারগণ জানান, এই ঘটনার পর থেকে আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। মঙ্গল মিয়া একজন গরিব মানুষ। তার মেয়েটি সহজ সরল। এক কথায় প্রতিবন্ধী। অবুঝ এ মেয়েটির সাথে যা হয়েছে, তা ন্যাকারজনক। এই ঘটনার সঠিক বিচার না হলে সমাজে এরকম ঘটনা আরো বাড়বে।
তারা আরো জানান, অভিযুক্ত লিল মিয়ার তিন কন্যা, স্ত্রী, ছেলের বউ ও নাতনি রয়েছে। কয়েক বছর আগে তার একমাত্র ছেলে মারা গেছে। আর স্ত্রী প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। লিল মিয়া আর্থিকভাবে সচ্ছল। তার স্বভাব চরিত্র নিয়ে সমাজে নানান কথা রয়েছে। লিল মিয়ার কু-দৃষ্টির কারণে তার মৃত ছেলের বউ বাড়িতে থাকে না। তার বাড়িতে যখন কেউ থাকে না, সে সময় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে তার বাড়িতে নিয়ে একাধিকবার লিল মিয়া শারিরিক সম্পর্ক করেছেন- লোকজনের কাছ থেকে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। ঘটনার সত্যতা পেয়ে সামাজিকভাবে লিল মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েটির বাবার অসহযোগিতার কারণে তার বিচার করতে পারি নাই। আশা করছি, আইনের মাধ্যমে মেয়েটি সঠিক বিচার পাবে।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে লিল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের লোকজন বাড়িতে থাকলেও তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
নবীনগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ সাইফুউদ্দিন আনোয়ার বলেন, মেয়েটিকে নিয়ে তার বাবা থানায় নিয়ে এসেছিল। ২৭ মে’র ঘটনায় মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ধর্ষণের কোনো আলামত পুলিশ পায়নি। সে কারণে থানায় মামলা নেয়া হয়নি। পরে মেয়েটির বাবা বিজ্ঞ আদালতে এ নিয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি নবীনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ৭ জুন রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার তদন্ত ও আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available