রাশেদ চৌধুরী: মানিকগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচের আবাদ হয় হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায়। এ অঞ্চলের মরিচ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারেও রপ্তানি হয়ে থাকে। ভাল ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় মানিকগঞ্জে এবার সাড়ে তিনশো হেক্টর বেশি জমিতে মরিচের আবাদ করেন চাষিরা। কিন্তু পাতা কুঁকড়ানো রোগ ও প্রচন্ড তাপদাহের কারণে মরিচের ফলন কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। এ অবস্থায় কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে উৎপাদন খরচ উঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। এমতাবস্থায় সেচের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে তিন হাজার ৫শ ৫১ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে তিনশো হেক্টর বেশি। প্রতিবছর এখানকার উৎপাদিত মরিচ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। গত বছরও প্রায় শতকোটি টাকার মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল মানিকগঞ্জ থেকে। এবছর প্রচন্ড গরম ও সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
৩৫ বছর ধরে মরিচের আবাদ করে আসছেন শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের তৈয়ব আলী। এবার ২ বিঘা জমিতে দেশীয় বিন্দু জাতের মরিচের আবাদ করেছেন তিনি। চারা কেনা, সার, কীটনাশক, সেচসহ দুই বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন তার জমি থেকে ২ থেকে ৩ মণ মরিচ তোলার কথা ছিল। কিন্তু এবার ফলন বিপর্যয়ের কারণে জমি থেকে কোনো মরিচই তুলতে পারছেন না। গাছের পাতা মুড়িয়ে যাচ্ছে, ফুলও আসছে না। সার কীটনাশক, সেচ দিয়েছেন কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছেন না।
হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকার মরিচ চাষি শের আলী জানান, আগের অবছর মরিচের ভাল দাম ও বাম্পার ফলন হওয়ার কারণে এবার এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে সাড়ে চার বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করি। কিন্তু শুধু আমি না আমাদের হরিরামপুরসহ পাশ্ববর্তী শিবালয় উপজেলার সব কৃষকের এবার মাথায় হাত।
তিনি বলেন, ফলন একেবারেই নাই। বিঘা বিঘা মরিচের গাছ পাতা কুঁকড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছের মাথা থুবরে গেছে। আগে প্রতি তোলায় যেখানে কয়েক মণ মরিচ পাওয়া যেতো, এখন সেখানে কয়েক কেজি পাচ্ছি। এই ঋণ কিভাবে শোধ করবো তার চিন্তায় ঘুমও শেষ।
খেত থেকে কাঁচামরিচ তোলার কাজ করেন সোনালী আক্তার। তার মত কয়েক শতাধিক মানুষ এই মৌসুমে এ কাজ করে থাকেন।
তিনি জানান, এবছর মরিচের এমন ফলন বিপর্যয়ের কারণে অনেক নারী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আমরা খেত থেকে যত কেজি মরিচ তুলবো তার বিনিময়ে টাকা পাব। আগে গাছে হাত দিলেই মরিচ পাওয়া যেত। আর এখন খুঁজে খুঁজে মরিচ ছিড়তে হয়।
জেলার অন্যতম মরিচের বড় আড়ত হরিরামপুরের ঝিটকা বাজারে। এ আড়ত থেকেই প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার কেজি মরিচ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এই সময়ে প্রতিদিন এই হাটে ১০ ট্রাক মরিচ আমদানি হওয়ার কথা। কিন্তু এখন মাত্র ৩ থেকে ৪ ট্রাক মরিচ দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে।
ঝিটকা বাজারের আড়তদার মোজাফফর হোসেন জানান, এ বছর মরিচের আমদানি আগের চেয়ে চারভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। আগের বছর প্রতিদিন যেখানে আমি ১৮ থেকে ২০ হাজার কেজি মরিচ কিনেছি, এখন সেখানে ৫ হাজার কেজিও কিনতে পারছি না। বাজারে মরিচের আমদানি কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় শ্রমজীবীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু মো.এনায়েত উল্লাহ জানান, সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মরিচের আবাদ জুলাই পর্যন্ত থাকবে। যেহেতু বছরে একাধিকবার মরিচের আবাদ করা হয়, তাই আবহাওয়া অনুকূলে আসলে কৃষকরা আগের মতন ফলন পাবে বলে আশা করছি। বর্তমানে উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সেচ ও সার ব্যবস্থাপনার প্রতি জোর দিতে বলা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available