সুমন আহমেদ, মতলব উত্তর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: কালের বির্বতণে আমাদের সভ্যতার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। কিন্তু সভ্যতার সাক্ষ্য হয়ে আজও টিকে আছে আমাদের যাপিত জীবনের অনেক অনুসঙ্গ। যেমন, শস্য সংরক্ষণের মাটির পাত্র। অঞ্চল ভেদে কোথাও এটিকে ডাকা হয় মটকা নামে , কোথাওবা এটিকে ডাক হয় মটকি। আবহমান বাংলার মৃৎশিল্পের অদ্ভুত এ নিদর্শণ এখনও দেখতে পাওয়া যায় চাঁদপুরের উত্তর মতলব এলাকার কৃষকদের ঘরেঘরে।
চওড়া ও গোলাকার আকিৃতির এসব পাত্র মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হয়। এশিয়ান টেলিভিশন অনলাইন সম্প্রতি খোঁজ নেয় উপজেলার সুগন্ধি গ্রামে। কথা হয় সেখানকার স্থানীয় আহম্মদ উল্লাহ প্রধানের সাথে। তিনি বলেন, আমার বাসায় বাবা-দাদার আমলে কেনা কয়েকটি মটকা আছে। তাদের ঐতিহ্য হিসেবে আমি এখনও এগুলোকে যত্নে আগলে রেখেছি। প্রতিটি মটকায় প্রায় আড়াই থেকে ৩ মণ চাল বা ধান সংরক্ষণ করা যায়। ধান -চাল ছাড়াও মটকার ভেতরে রাখা যায়, গম, কাউন, তিল এবং সরিষা।
জানা যায়, ষাটের দশকে পোড়ামাটি দিয়ে তৈরী মটকার বেশ জনপ্রিয়তা ছিলো। এ সময় মানুষ মটকায় বিভিন্ন বীজ ও ধান-চাল সংরক্ষণ করে রাখতো। কিন্তু কালের বিবর্তণে এখন মটকার সে আবেদন আর নেই তাই কুমাররাও আর নতুন করে মটকা তৈরি করেছেন না । ফলে মটকার প্রচলন এখন নেই বললেই চলে।
কথা হয় মতলবের কুমার পাড়ার বিবেন্দ্র লালের সাথে। তিনি বলেন, এখন আর বড় সাইজের মটকা কেউ তৈরি করে না। মটকা তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। প্রথমে কালো মাটি সংগ্রহ করে এনে তা বিশেষভাবে ছেনে নিতে হয়। পরের ধাপে চাকে ঘুড়িয়ে মটকার আকৃতি দিতে হয়। এ সময় পরিমিতো তাপ দিয়ে মটকার আকৃতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পরের ধাপে মটকাগুলোকে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। এর পরে মটকার উপরে বিশেষ কালো রঙের প্রলেপ লাগানোর পালা। এ প্রলেপ লাগানের পরে মটকাগুলোকে আবারও হালকা রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। সবশেষে নিয়ন্ত্রিত আগুনের তাপে এগুলো পুরিয়ে ব্যবহাররের উপযোগী করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ ধরনের আঁঠালো কালো রঙের মাটি দিয়ে এই মটকা তৈরি করা হয়। এ ধরনের মটকায় খাদ্যশস্য রাখার পর মুখ ঢেকে রাখলে ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারেনা। এ কারণে সংরক্ষিত খাদ্যশস্য দীর্ঘ দিন ভালো থাকে। মাটির পাত্র স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় এতে খাদ্যশস্য রাখা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ ।
নব্বইয়ের দশকে গ্রামের অনেক বাড়িতেই মাটির তৈরি বড় মটকায় পানি রেখে শীতল করা হতো। এ ছাড়া পানি সংরক্ষণেও মটকা ব্যবহৃত হতো। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় পানির স্বাদ থাকতো অটুট। আধুনিক সময়ে যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে মটকা আমাদের দৈন্দিন জীবন থেকে হাড়িয়ে গেলেও সু-স্বাস্থ্যের প্রশ্নে এটির উপযোগীতা এখনও রয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available