রংপুর ব্যুরো: ‘তুমি কি একাই আছ। আমি তোমাকে খুব লাইক করি। আমি যতদিন বেঁচে আছি তোমার সবকিছু দেখব। তুমি জামাকাপড় নেবে না? আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তুমি জামাকাপড় কিনিও। আগামীকাল তোমার পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০ টায়। তুমি সকাল ৯ টায় সরাসরি আমার অফিসে আসিও। এ সব কথা আবার কাউকে বলিওনা।’ সম্প্রতি রংপুরের বদরগঞ্জে চম্পাতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রিকে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের করা এমনই একটি ফোনকল ভাইরাল হয়।
রংপুরের বদরগঞ্জ চম্পাতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একই প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১৫ জুন বৃহস্পতিবার ঘটনা জানাজানি হলে ফুঁসে উঠেন স্থানীয়রা। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষুদ্ধ জনতা বিদ্যালয়ে তালা ঝুঁলিয়ে দেয়। ফলে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঐ প্রধান শিক্ষক এর আগেও ২০১১ সালে নারী কেলেঙ্কারীর কারণে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে নিজের প্রভাব খাটিয়ে তিনি আবারও চাকরিতে পুনর্বহাল হন।
১৪ জুন বুধবার রাতে প্রধান শিক্ষকের ঐ ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকশ নারী-পুরুষ বিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে বিক্ষোভ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ নারীরা হাতে ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন। তারা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ কারণে বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালেয়ের জমিদাতা পরিবারের সদস্য তাপস চন্দ্র রায় বলেন, প্রধান শিক্ষকের এ ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপের ফলে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা চাই এই শিক্ষককে অপসারণ করা হোক। তা নাহলে একের পর এক এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, বারবার এমন ঘটনার কারণে স্কুলের সুনাম নষ্ট হয়েছে। আগামিতে আমরা ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতে পারব কিনা সন্দেহ। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কোন অবিভাবকই আর তাদের ছেলে-মেয়েকে আমাদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সাহস পাবে না।
এ দিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) কাশফিয়া তাশরিণ। এ সময় তার সাথে ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম শহিদুল ইসলাম ও বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান। এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে হ্যান্ড মাইকে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত হয়ে বিদ্যালয়ের তালা খুলে দেয়ার আহবান জানালেও তাতে সায় দেয়নি কেউ।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়কে রক্ষার জন্য ঐ প্রধান শিক্ষককে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ দিকে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাককে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা হচ্ছে তা সবই ষড়যন্ত্র। আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করি বলে আমাকে হেনস্থা করার জন্য এটি করা হয়েছে।
এসময় ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি তার কিনা এমন প্রশ্ন করতেই তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে কলটি কেটে দেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available