শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সাতপাড়া বাজারে দুপক্ষের টেটাযুদ্ধে দুজন নিহতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শাল্লা থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দুটিতে স্থানীয় প্রায় শতাধিক লোককে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন নিহত সাবেক ইউপি সদস্য হবিবুর রহমানের স্ত্রী মিনা বেগম এবং অন্যটি করেছেন নিহত হেলাল উদ্দিনের চাচাতো বোন মিনারা বেগম।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতাপাড়া বাজারে একটি ঘড় নির্মানকে কেন্দ্র করে ২৭ জুন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় কার্তিকপুর গ্রামের মজিবুর রহমান ও ইউছুফ-রিক্সন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান টেঠাবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হন। এসময় তাকে উদ্ধার করে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দুপুর ১২ টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। এর ২ ঘন্টা পর হটাৎ করে অপর পক্ষের হেলাল উদ্দিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে শাল্লা থানা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) গুরুতর আহত হন।
এদিকে হেলাল উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ধোয়াসার সৃষ্টি হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ জুনের সংঘর্ষে সকাল ১১ টায় ঘটনাস্থলে হেলালকে প্রথমে ধারালো রামদা দিয়ে মাথায় আঘাত করে মুজিবুর রহমান। পরে অন্যান্য আসামীরা তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে, এসময় হেলাল মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি হেলালকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে খালিয়াজুড়ীর হাওরে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু স্থানীয় অনেকেই বলছেন ভিন্ন কথা। প্রত্যক্ষদর্শী সাতপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী ও খালিয়াজুরী উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের সমীর সরকার জানান, ঘটনার দিন আমি বাজারেই ছিলাম, ঘটনার দেড়-দুই ঘন্টা পর (বৃষ্টি থামার পর) আমি কাচা বাজারে যাওয়ার পথে হেলালকে রাস্তায় দেখতে পাই এবং তাকে বাজারের দিকে যেতে নিষেধ করি। মুরাদপুরের সুনীল দাস জানিয়েছেন, তিনিও দুপুর একটা-দেড়টার মধ্যে আদিত্যপুর গ্রামের সামনের রাস্তায় হেলালকে হেটে যেতে দেখেছেন।
এদিকে ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলরামপুর গ্রামের প্রনয় সরকার বলেন, ঘটনার দিন সাতপাড়া বাজারের মারামারির পর আনুমানিক দেড়টার দিকে কার্তিকপুরের ইউছুফ-নিজাম-রিক্সন গ্রুপের ৭-৮ জন লোক অনেকটা জোর করে আমার নৌকা উঠে এবং মুরাদপুরে যেতে বলে। আমি মুরাদপুর গ্রামের উত্তর পাশের বাধে নৌকা ভেড়ালে ৩-৪ জন লোক নেমে যায়। এসময় রিক্সন আমার নৌকাতেই ছিলো। সে আমাকে মিলন বাজার যেতে বললে আমি রওয়ানা হই। এ সময় হেলালকে আমার নৌকার পাশেই আরেকটি ডিঙ্গি নৌকায় বসে থাকতে দেখে এসেছি। এর প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট পরেই আমার নৌকায় বসা রিক্সন বলে হেলাল মারা গেছে।
হেলালের শরীরে বড় কোন ধরনের আঘাত ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না! কোনো আঘাত ছিল না, তাকে সুস্থ মনে হয়েছিলো।
এদিকে হেলালের মরদেহ বহনকারী নৌকার মাঝি তোফাজ্জল মিয়া জানান, ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় হেলালকে আজমিরীগঞ্জ বাঁধ থেকে তাঁর নৌকায় করে কার্তিকপুরে আনা হয়েছে। বেলা ১ টা ২০ মিনিটে নামিয়ে দেয়ার সময় গোলাম রব্বানী নামের একই গ্রামের একজন প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন। মামলার এজাহারে হেলালকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও তার মরদেহ থানায় বহনকারী স্পিডবোট চালক জানায় হেলালের মরদেহ আনা হয়েছে ইটনা থানার চৈতন্যপুর গ্রাম থেকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা সকল তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে সুস্পষ্ট গড়মিল পাওয়া গেছে।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, তদন্তের স্বার্থ এখন কোনো কিছুই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্ত শেষে সবকিছু জানানো হবে।
উল্লেখ্য, হেলাল খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী মিনারা বেগমের দাবী, সংঘর্ষের দিন হেলাল ঘটনাস্থলেই ছিলো এবং সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের রামদার আঘাতে তার মৃত্য হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available