কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় হাতি দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হচ্ছে। হাতির মাহুত সেলামির নামে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন আটকিয়ে চাঁদা তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা।
১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার নুনুজ হাট এলাকায় মোসলেমগঞ্জ-কিচক আঞ্চলিক সড়কে বিভিন্ন যানবাহন আটকিয়ে এবং ১৪ জুলাই শুক্রবার সকালে মোসলেমগঞ্জ হাট এলাকায় একটি হাতিকে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে।
চাঁদা ওঠানোর খবর পেয়ে কালাই বনবিভাগের লোকজন ওই এলাকায় গিয়ে হাতির মাহুতকে হাতেনাতে ধরে চাঁদা আদায় বন্ধ করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কালাই বনবিভাগে কর্মরত বাগান মালি জহুরুল ইসলাম বলেন, সড়ক যানবাহন আটকিয়ে ও বাজারের দোকানীদের নিকট থেকে হাতি নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা ওঠানোর খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি। টাকা ওঠানার সত্যতাও পেয়েছি। টাকা ওঠানো বন্ধ করে মাহুতকে হাতি নিয়ে তার নিজের এলাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু পরে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থান থেকে চলে আসলে, তারা আবার ওই সড়কেই চাঁদা আদায় শুরু করেন। ফেরত না গিয়ে বরং হাতি নিয়ে মাহুত সামনের বাজারের দিকে এগিয়ে যান।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, কয়েকদিন যাবত সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিভিন্ন হাটবাজারে হাতির মাহুত সেলামির নামে চাঁদা তুলছেন। চাঁদা দিলে হাতি শুঁড় দিয়ে নিয়ে মাহুতকে দেয়। আর চাঁদা না পেলে উচ্চস্বরে হুংকার দিয়ে গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়। ভয়ে ব্যবসায়ী ও পথচারী বাধ্য হয়ে চাঁদা দিচ্ছেন।
নুনুজ বাজারের ব্যবসায়ী মিলন রহমান বলেন, হাতির জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। চাঁদা না দিলে নানাভাবে আমাদের বিরক্ত করে, ভয়ভীতি দেখায়। তাই ভয়ে চাঁদা দিচ্ছি। এটা নতুন কিছু নয়, অনবরত তারা এ কাজ করেই যাচ্ছেন। এটা একটা চাঁদাবাজির কৌশল । দিনের বেলায় প্রকাশ্যে চাঁদা তুলছে, আর কেউ এর প্রতিবাদ করছে না।
ওই বাজারের মুদিদোকানি ওয়াদুদ মন্ডল বলেন, সকালে কেবল দোকান খুলে বসেছি। ঠিক তখনই হাতি এসে দোকানের সামনে হাজির। টাকা নেই বলার পরও হাতি যাচ্ছে না। শুঁড় দিয়ে আমার গায়ে পানি দিয়েছে। দোকানের মালামাল উল্টাপাল্টা করেছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রথমে ১০ টাকা চাঁদা দিয়েছি। না মানায় পরে ২০ টাকা দিয়েছি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নূরুল ইসলাম নামের এক পথচারী মোসলেমগঞ্জ-কিচক সড়ক দিয়ে কালাই থেকে মোসলেমগঞ্জ বাজারের এক আত্মীয়ের বাসায় স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, এ সময় সড়কের নুনুজ এলাকায় একটি হাতি পথ রোধ করে। ভয়ে আমার সন্তান চিৎকার করতে থাকে। তড়িঘড়ি করে ২০ টাকা দিল হাতি নেয় না। পরে ৫০ টাকা দিলে রাস্তা ছেড়ে দেয়।
হাতির মাহুত শরিফুল ইসলাম বলেন, চাঁদা তো না, সাহায্য নিচ্ছি। বর্তমান সময়ে যাত্রা-সার্কাস বন্ধ থাকায় হাতি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। হাতিকে খাওয়ানোর জন্য সাহায্য চাইতে নিজ বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড় থেকে হাতি নিয়ে কালাই পর্যন্ত এসেছি। সারাদিন যা পাই, তা দিয়ে হাতির খরচ রেখে অতিরিক্ত টাকা মালিক নিয়ে যায়। পর্যাপ্ত টাকা তুললে না পারলে মালিক বকাঝকা করে।
এ ব্যাপারে কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, হাতি দিয়ে চাঁদা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এ রকম ঘটনা আমাকে আগে কেউ জানান নি। তবে এখন থেকে খোঁজ রাখা হবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available