মেহেন্দিগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: কালাবদর ও তেতুলিয়া নদীর চলমান ভাঙ্গনে আশ্রয় হারাচ্ছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের শত শত পরিবার। ভিটামাটি হারিয়ে এখন তারা পুরো নিঃস্ব। জনপ্রতিনিধিরা বার বার ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজন কোন আর্থিত সহায়তা কিংবা তারা দয়া চান না। সরকারের কাছে তাদের দাবি, বসতভিটা রক্ষায় যেন নেয়া হয় কার্যকরী পদক্ষেপ।
১৯ জুলাই বুধবার বেলা ১২টায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নদীরপাড়ে মানববন্ধন করেছে শ্রীপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ।
এছাড়াও মানববন্ধন শেষে বরিশাল এসে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে স্মারকলিপি প্রদান করেন গ্রামবাসী। দুই স্থান থেকে তাদের আশ্বাস দেয়া হয় ভাঙ্গন প্রতিরোধে। কিন্তু ভাঙ্গনকবলিত মানুষগুলো এখন আর আশ্বাস চান না, তারা চান ভাঙ্গন প্রতিরোধ।
মানববন্ধনে তারা জানান, গেল সাত বছর ধরে এ ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও কোন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রতি বছর চার থেকে সাড়ে চারশ’ বসতবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। উচ্চ, মধ্য ও নিম্মবিত্ত থেকে হতদরিদ্রদের কাতারে নেমে এসেছেন এ এলাকার হাজার হাজার পরিবার। তারা বিভিন্ন গ্রামবাসীর জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলোর চোখের পানি ছাড়া আর কিছু নেই। তাদের একটাই দাবি নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের।
ওই এলাকার বাসিন্দা মাহামুদ হাসান বেপারী বলেন, প্রতি বছর ভাঙ্গন শুরু হলেই এমপি থেকে শুরু করে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন দপ্তর থেকে কর্মকর্তারা এসে পরিদর্শন করে আশ্বাস দিয়ে ফিরে যান। সেই আশ্বাসে ভরসা রাখতে গিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। তিনটি গ্রাম শ্রীপুর, মিয়ারচর ও বাহেরচরের অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে শ্রীপুর, মিয়ারচর, বাহেরচর, চর ফেনুয়া, চরবগি ও চরমহিষা। গত এক মাসের ব্যবধানে ওই সকল গ্রামের বসত ঘর, বাগান বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রতিদিন ঘর ভেঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছে গ্রামবাসী।
ইউনুস জমাদ্দার বলেন, আগুন পুড়লে ভিটা থাকে। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে পড়লে কিছুই থাকে না। গত সাত বছরের ব্যবধানে শ্রীপুরের বহু মানুষ সাত থেকে আটবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে। যাদের বাড়িতে কামলা ছিল, তারাই এখন কামলা দিচ্ছে বিভিন্ন বাড়িতে। আর যারা কামলা দিতে লজ্জা পান, তারা শহরমুখী হয়েছেন। বহু গ্রামবাসী বসত ভিটা ও জমি হারিয়ে পথে বসেছে। অথচ সরকার থেকে দৃষ্টি দেয়া হলে ভাঙ্গনকবলিত লোকগুলোতে নিঃস্বের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হতো।
তিনি অভিযোগ করেন, যখনই ভাঙ্গন শুরু হয়, তখনই পরিদর্শনের পর পরিদর্শন করেন জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা। সেই পরিদর্শন আর আলোর মুখ দেখে না। অথচ প্রথম পরিদর্শন আলোর মুখ দেখলে এ অবস্থায় পড়তে হতো না গ্রামবাসীকে।
আমির হোসেন গাজী ও আবুল হোসেন সিকদার বলেন, বছরের পর বছর ভাঙ্গনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। এতে করে ভাঙ্গনকবলিত পরিবারের সন্তানরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমানে ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে শ্রীপুরের একমাত্র মহিষা ওয়াহিদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। ওই বিদ্যালয়টি কোনভাবে নদীগর্ভে বিলীন হলে পঞ্চম শ্রেণির পর আর লেখাপড়ার সুযোগ থাকবে না। তাছাড়া বাহেরচর ফেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রীপুর ইউনিয়ন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিতকরণসহ নদী ভাঙ্গনরোধে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available