রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ভাঙনের কবলে নয়ারচর গ্রাম। ৭-৮ বছরে কেউ হারিয়েছে ভিটেবাড়ি, কেউ হারিয়েছে সহায়-সম্বল। তেতুলিয়া নদীর গ্রাসে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব। তবুও জন্মভিটায় টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। ভাঙন কবলিত এই গ্রামটির অবস্থান পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে।
স্থানীয়রা জানান, সর্বনাশা এই ভাঙন শুরু হয়েছে ৭-৮ বছর আগে। এ পর্যন্ত শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে । ভাঙনের কারণে কেউ কেউ বসতভিটে বদল করেছেন তিন-চার বার। তবুও যেন ভাঙন তাদের পিছু ছাড়ছে না।
২৪ জুলাই সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙনের কারণে নয়ারচর গ্রামের মিটার বাজারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় থাকলে বাঁধটি যেকোন মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে হুমকিতে পড়বে ফসলি জমি, শতাধিক বসতবাড়ি ও ১৫-১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভিটেবাড়ি আর সহায়-সম্বল টিকিয়ে রাখার জন্য গ্রামবাসীর অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু করেছে গ্রামবাসী।
এ জন্য কেউ দিয়েছেন গাছ, কেউ দিয়েছেন শ্রম, কেউ আবার অর্থ। অর্ধশতাধিক মানুষের শ্রমে বাঁধ রক্ষার এই কাজ করা হয়। স্থানীয়রা জানান, তিন দফায় বাঁধটি সংস্কারের কাজ করা হয়। সবশেষে গতবছর নয়ারচর গ্রামের এই বাঁধটি নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাঁধটির কয়েকটি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকার বাসিন্দা কালাম কাজি (৭০) বলেন, ‘এই বাঁধের কারণে ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ ভেসে যায়। বার বার বাঁধ ভেঙে যায়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ‘বাঁধটি মজবুত করে মেরামতের।’ একই গ্রামের মান্নান ফকির (৬০) বলেন, ‘ভাঙনে একেকজনে কয়েক বার করে ভিটেবাড়ি বদলাইছে। আর কতবার এরকম ভিটা বদলাইতে হইবে আল্লাহ জানেন।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নয়ারচর বাঁধের অবস্থা নাজুক। বেশি খারাপ অবস্থা মিটার বাজার এলাকায়। সেই অংশের বাঁধ ভেঙে গেলে পুরো নয়ারচর জোয়ারে তলিয়ে যাবে। তখন এই এলাকার দুই হাজার পরিবার বিপদে পড়বে। তাই বাঁধটি মেরামত করা প্রয়োজন। স্থানীয় লোকজন বাঁধ রক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অস্থায়ী।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জনস্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ অবশ্যই মেরামত করা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবো।’
এ ব্যাপারে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। মঙ্গলবার বাঁধ পরিদর্শন করে সার্ভে করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available