রফিকুল ইসলাম ফুলাল: বাংলাদেশে প্রথমবারের মত কৃত্রিম উপায়ে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্ছা ফোটালো দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের এক দল গবেষক।
বিদেশ থেকে উটপাখির বাচ্ছা সংগ্রহ করা হতো ,যা ছিল ব্যয়বহুল। দেশে উটপাখির বাচ্ছা উৎপাদন হলে আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি আমিষের ঘাটতি পূরণে সৃষ্টি হবে নুতন মাত্রা। দীর্ঘ দুই বছর অপেক্ষার পর উটপাখির ডিম থেকে বাচ্ছা ফুটানোর মধ্য দিয়ে দেশে একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো বলে মনে করেন হাবিপ্রবি গবেষক দল।
দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষণাগারে ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়েছে। দেড় মাস আগে ইনকিউবেটরে ১৯টি ডিম বসানো হয়েছিল। সেখান থেকে গত মঙ্গলবার একটি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে। বাচ্চাটির ওজন ৯৪৮ গ্রাম।
ইনকিউবেটরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি তাকের ট্রেতে সাজানো রয়েছে সারি সারি উটপাখির ডিম। ঠিক নিচের ট্রেতে চুপটি মেরে বসে আছে একটি উটপাখির ছানা। গায়ে ধূসর রঙের মসৃণ হালকা লোম। শব্দ পেয়ে এদিক-সেদিক উঁকি দিয়ে যাচ্ছে ছানাটি। আড়াই বছর ধরে উটপাখির বংশবৃদ্ধি, বাণিজ্যিকভাবে উটপাখির চাষ করে দেশে প্রোটিনের জোগান দেওয়া। জেনেটিক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ গাফফারের গবেষণায় দীর্ঘ অপেক্ষার সফলতা পেয়ে খুশি গবেষকরা। বর্তমানে উটপাখির ছানাটিকে সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করছে হাবিপ্রবি গবেষণাগারের স্টাফরা।
হাবিপ্রবি জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষক খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উট পাখি পালনের সম্ভবনা, পালনের পদ্ধতি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৌশল অবলম্বনই ছিল রিসার্সের মুল লক্ষ্য। ২০২১ সালে ১৯টি উট পাখির ডিম বাচ্চা ফোটাতে ইনকিউবিটরের তাপমাত্রায় রেখেছিলাম, কিন্তু কোনো বাচ্চা পাইনি। পরবর্তীতে একই পদ্ধতি অবলম্বন করে ২০২২ সালেও ধাপে ধাপে ৩৬টি ডিম রেখেছিলাম, সেখান থেকেও বাচ্চা পাওয়া যায়নি। ২০২৩ সালে প্রথম ১৩টি ডিম বসানো হয়েছিল, কিন্তু তাতেও বাচ্চা আসেনি। এরপর একই বছর আবারও ৬টি ডিম বসানো হয়, সেখান থেকে গত ১১ জুলাই মঙ্গলবার ৯৪৮ গ্রাম ওজনের একটি উট পাখির বাচ্চা পাওয়া গেছে, যা নিংসন্দেহে আমাদের গবেষণার সাফল্য।
হাবিপ্রবি জেনেটিকস বিভাগের ডীন ভেটেরিনারি আ্যন্ড অ্যানিমেল সায়েন্সের অধ্যাপক ডা. উম্মে সালমা বলেন, আমাদের গবেষক দলের দীর্ঘ চেষ্টার পর দেশে প্রোটিনের যোগান দিতে প্রথমবারের মত উটপাখির বংশবিস্তারের সফলতা পাওয়া গেলো। এর আগে দেশে এধরনের সফলতা পাওয়া যায়নি। এটাই প্রথম ইনকিউবিটরে উট পাখির বাচ্চা ফোটানো হলো।
হাবিপ্রবি জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাশেদুল ইসলাম মনে করেন, গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ইনকিউবিটরের মাধ্যমে বেশি বেশি বাচ্চা ফুটিয়ে স্বল্প খরচে খামারীদের বাচ্চা সরবরাহ করতে পারলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবানসহ দেশে প্রোটিনের যোগান দেওয়া সম্ভব হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available