ফিরোজ মোস্তফা, বরিশাল ব্যুরো: যানবাহন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী বরিশাল নগরীতে বৈধ যানবাহনের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। রুট-পারমিট মেনে না চলা এবং নির্দিষ্ট কোনো স্টপেজ (গাড়ি থামানোর স্থান) না থাকায় এক সময়ের যানজটমুক্ত নগরী এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নগরীতে আরো ৫শ’ সিএনজি গাড়ি চলাচলের অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ঈদ-উল আযহার পূর্বে বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানদের সমন্বয়ে (আরটিসি) অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সড়কে এসব সিএনজি চলাচলের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ধাপ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২ মাসের মধ্যে যানজটের এই নগরীর সড়কে যুক্ত হবে আরও ৫শ’ সিএনজি।
বরিশাল বিআরটিএ’র বিভাগীয় পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, নগরীতে ৫শ’ সিএনজি চলাচলের অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন পরবর্তী কার্যক্রমগুলো ধাপে ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে। বরিশাল বিআরটিএ’র সহকারী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে প্রথমে এ বিষয়ে আমাদের কাছে প্রস্তাব আসে। পরে বিষয়টি আরটিসি সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে পাশ হয়। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত ৫শ’ চালককে আগে থেকেই নির্ধারণ বা সিলেক্ট করা হয়। এখন শেষের দিকের কিছু ধাপ বাকি রয়েছে। তারপরও সরবারহকারী কোম্পানির সরবারহ সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে সড়কে গাড়ি কবে নাগাত চলাচল করবে। তবে আমার ধারণা, ১ থেকে ২ মাসের বেশি সময় লাগবে না।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তারবীর আরাফাত বলেন, আরটিসি সভায় কমিশনার স্যার উপস্থিত থাকেন। এ সভায় নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য রয়েছে। তারাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সত্যি যে, নগরীতে বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে বৈধ যানবাহনের মধ্যে অবৈধর সংখ্যাই বেশি। বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টরা যদি বৈধ গাড়ির লাইসেন্স প্রদান করেন, তাহলে ট্রাফিক বিভাগের কোনো সমস্যা নেই। কারণ, বৈধ নয় অবৈধ গাড়িই ট্রাফিক বিভাগের মূল সমস্যা। তিনি আরো বলেন, বৈধ গাড়ির অনুমোদন দিলে সরকারের রাজস্ব বাড়ে। তবে নতুন করে গাড়ির অনুমোদন দেওয়ার আগে অবশ্যই নগরী থেকে অবৈধ গাড়ি দূর করতে হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগ বিআরটিএ, সিটি করপোরেশনসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
নগরীর সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, গোটা নগরী যেখানে যানজটে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে নতুন করে ৫শ’ সিএনজির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। তবে যদি নগরী থেকে অবৈধ যানবাহন অপসারণ করা সম্ভব হয় তাহলে বৈধ ৫শ’ গাড়ি সমস্যার কোনো কারণ হবে না বলে মনে করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের আমতলার মোড় থেকে চান্দু মার্কেট, সদর রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিবির পুকুরপাড়, ফজলুল হক এভিনিউ, লাইন রোডের মুখ ও নতুন বাজার মোড়, জেলখানার মোড়সহ কয়েকটি পয়েন্টে যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে পুরো নগরবাসী। এসব পয়েন্টে যানজটের প্রধান কারণ সরু রাস্তা। এছাড়া তিন চাকার যানবাহনের আধিক্য, বিশেষ করে গ্যাসচালিত সিএনজি, হলুদ অটো, ব্যাটারি চালিত রিক্সা পুরো নগর দখল করে আছে। এসব যানবাহনের বেশিরভাগই অবৈধ। অনেকের নিবন্ধন নেই, অনেকে আবার চলছে রুট-পারমিট ছাড়েই। এসব যানবাহন আবার যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে প্রতিনিয়ত।
এছাড়া নগরীর নতুনবাজার মোড় ও জেলখানার মোড়ের রাস্তাজুড়ে কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, মুদিবাজার ও অসংখ্য রেস্টুরেন্টের সমাহার। এর ওপর চলার পথ তুলনামূলকভাবে সরু। নগরীর সদর রোড থেকে জেলখানার মোড় হয়ে নথুল্লাবাদ ও বিএম কলেজ পর্যন্ত প্রধান সড়কও এটি, যে কারণে তিন চাকার যানের আধিক্যও এ সড়কে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশেই ব্যক্তিগত গাড়ি রেখে বাজার করতে হয় সেখানকার নাগরিকদের। এতেও তীব্র হচ্ছে যানজট।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available