মো. আল আমিন, বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে স্কুলের নামে বায়নাকৃত ১৪ শতাংশ জমির মধ্যে সাড়ে ১০ শতাংশ স্কুলের নামে আর সাড়ে ৩ শতাংশ জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন নাজিরুল ইসলাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহ মুহম্মদ আফজল।
ঘটনাটি জানাজানি হলে বিদ্যালটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্নভাবে পোস্টারিং করে স্কুলের জমি ফেরত ও প্রধান শিক্ষকের অপসারণে দাবি জানান।
পৌর শহরে ১৯৩৭ সালে ‘বাজিতপুর টাউনহল হাইস্কুল’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। পরে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘নাজিরুল ইসলাম কলেজিয়েট স্কুল’।
স্কুলের জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে সীমানা প্রাচীরের বাইরে একই এলাকার বেবী মাস্টারের স্ত্রীর কাছ থেকে ২০২০ সালের ৫ মার্চ ১৪ শতাংশ জায়গা ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্য ঠিক করে ৮ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান করে বায়নাপত্র দলিল করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বায়নাকৃত জমিতে মাটি ভরাট করে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করে জায়গাটিকে স্কুলের সীমানা প্রাচীরের আওতায় নিয়ে আসে।
২০২৩ সালের ১২ জুলাই সাড়ে ১০ শতাংশ জায়গা স্কুলের নামে আর সাড়ে ৩ শতাংশ জায়গা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহ মুহাম্মদ আফজাল নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়।
এ নিয়ে জমির মালিক বেবী মাস্টারের স্ত্রী গোলশান আরা বেগম বলেন, তিনি মহৎ কাজ হিসেবে স্কুলের জন্য নামেমাত্র মূল্যে জমিটি বিক্রি করতে রাজি হয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষকের নামে রেজিস্ট্রি হবে এমনটা রেজিস্ট্রি করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জানতেন না। রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলে স্বাক্ষর করার সময় দুটি দলিল দেখে বিস্মিত হন তিনি ও তার মেয়ে। প্রথমে স্বাক্ষর করতে না চাইলে পরে প্রধান শিক্ষক শাহ মুহম্মদ আফজল তাকে বলেন স্কুলের ফান্ডে টাকার সমস্যা। তাই আপাতত সাড়ে তিন শতাংশ জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে পরবর্তীতে স্কুলকে ফেরত দিয়ে দিবে৷
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শাহ মুহাম্মদ আফজলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ গোলশান আরা বেগমের সাথে ১৪ শতাংশ জমি কেনার চুক্তি করেছিলো। কিন্তু তার প্রকৃত জমি ৯ শতাংশ ছিলো। তিনি প্রকৃত তথ্য গোপণ করেছিলেন। তার মেয়ে সানজিদা আরা শাকির নামে ৫ শতাংশ জমি ছিলো। গোলশান আরার কাছ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ৯ শতাংশ জমি আর সানজিদা আরা শাকির কাছ থেকে দেড় শতাংশ জমি নিয়ে মোট সাড়ে ১০ শতাংশ জমি স্কুলের নামে রেজিস্ট্রি করেছি। আর বাকি সাড়ে তিন শতাংশ জমি গোলশান আরার মেয়ে সানজিদা শাকির কাছ থেকে আলোচনা সাপেক্ষে আমার নামে রেজিস্ট্রি করেছি। এখন স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে সাড়ে তিনশতাংশ জমি স্কুলের নামে ফেরত দিয়ে দিবো। আমার স্ত্রীর গয়না বিক্রি ও জমানো টাকা দিয়ে আমি এ জমি কিনেছিলাম।
তবে জমির মালিক গোলশান আরা বেগম বলেন, আমি ও আমার মেয়েতো একই পরিবারের এবং একই ধরনের সিদ্ধান্তে অটল। আমার সাথে ১৪ শতাংশের চুক্তি হয়েছিলো। আমার নামে ৯ শতাংশ ও মেয়ের নামে ৫ শতাংশ জমি ছিলো। প্রধান শিক্ষক ইচ্ছা করলে মা-মেয়ের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী ১৪ শতাংশ জমিই স্কুলের নামে রেজিস্ট্রি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কৌশলে তার নামে সাড়ে তিনশতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available