নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কেয়া-আরহাম নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতারণার ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই ফাউন্ডেশন থেকে গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগি এবং বিভিন্নভাবে ঋণ দেওয়ার নামে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশন রাণীনগর শাখার ব্যবস্থাপক শাম্মি আক্তার সুমির বিরুদ্ধে।
৭ আগস্ট সোমবার ৮ জন ভুক্তভোগী নারী একযোগে ওই ফাউন্ডেশন ও শাখা ব্যবস্থাপক সুমির বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ এনে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের রেলগেট এলাকায় ২০২৩ সালে কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশনের শাখা অফিস খোলা হয়। ওই ফাউন্ডেশনের রাণীনগর শাখার ব্যবস্থাপক হিসাবে দায়িত্ব পান দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে শাম্মি আক্তার সুমি। ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই উপজেলার গ্রামে গ্রামে বেশকিছু কেন্দ্র খোলা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় রাণীনগর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ওই ফাউন্ডেশনের নামে ব্যবস্থাপক সুমির নানা প্রতারণা।
অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরে সুমি উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামে যান। সেখানে লিপিকে কেন্দ্র প্রধান করে একটি কেন্দ্র খোলা হয়। ওই কেন্দ্রে সদস্য হন ১৫ জন। ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক সুমি ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে ১৫ জন সদস্যকে গরু-ছাগল দেওয়ার কথা বলে ৬শ’ টাকা করে নেন। এরপর ১৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে দিন পার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ১৫ জনের মধ্যে ৫ জনকে ১০টি করে ছোট ছোট মুরগির বাচ্চা দেন। আর বাকি ১০ জনকে তিনি কিছুই দেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি। এরই মধ্যে রাণীনগর সদরের পার্শ্বর্তী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে কর্মী নিয়ে গিয়ে সুমি সেখানেও কেন্দ্র তৈরি করেন। ওই কেন্দ্রে প্রবাসীদের ২ থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণসহ বিভিন্নভাবে ঋণ দেওয়ার নামে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সফুরা, নাছিমা, পাখি ও সেফালীসহ ৯ জনের কাছে থেকে মোটা অংকের অর্থ নেন। এরপর ফাউন্ডেশন থেকে তাদের ঋণ দেওয়াতো দূরের কথা, তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকাগুলোর ফেরত দেওয়া হয়নি।
অভিযোগে আরও জানা যায়, উপজেলার নয়াহরিশপুর গ্রামের বেশকিছু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন শাখা ব্যবস্থাপক। এরপর দীর্ঘদিনেও তাদের ঋণ এবং টাকা ফেরত না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে ২ আগস্ট টাকা উদ্ধারে ফাউন্ডেশনের রাণীনগর শাখায় অবস্থান নেন সেখানকার মানুষ। পরে চাপের মুখে পরে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেন।
ভুক্তভোগী উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের লিপি বিবি জানান, ওই ফাউন্ডেশনের রাণীনগর শাখা ব্যবস্থাপক সুমি আমাদের গ্রামের ১৫ জনকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এসবের প্রতিকার চেয়ে আমরা ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
সিম্বা গ্রামের ফজলু ও তার স্ত্রী জানান, আমাদের ঋণ দিতে চেয়ে ফাউন্ডেশনের সুমি ৪ হাজার টাকা নিয়েছে, কিন্তু আজও ঋণ দেননি। এছাড়া আমার ছেলেকে আনসার বাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আরও ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
আরেক ভুক্তভোগী আরজিনা জানান, আমিসহ দুইজনকে এক লাখ টাকা করে ঋণ দিতে চেয়ে আমাদের দুইজনের কাছ থেকে ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন সুমি। এছাড়া আমাদের এলাকার একজনকে ৫ লাখ টাকা ঋণ দিতে চেয়ে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমার দেবরকে লোন দিবে বলে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। বেশ কিছুদিন হলে গেলেও ঋণ না দিয়ে ঘুড়াচ্ছেন।
বড়বড়িয়া গ্রামের ভুক্তভোগী শামীম জানান, আমি অসুস্থ মানুষ। আমাকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করানোর জন্য এবং আর্থিক অনুদান পাইয়ে দেওয়ার জন্য ফাউন্ডেশনের সুমি আমার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা করায়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশনের রাণীনগর শাখা ব্যবস্থাপক শাম্মি আক্তার সুমি বলেন, কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশনটি রাণীনগরে আমার নিজ দায়িত্বে পরিচালনা করে আসছি। বর্তমানে আর্থিক ঋণের ক্ষেত্রে চেক ও স্ট্যাম্পের কোনো আইনগত মূল্য নেই। তাই ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঋণের পরিমাণের বিপরীতে জামানত নিয়েছি। যাচাই বাছাই করে ঋণ দেওয়ার মতো হলে দিবো। আর যে সকল অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে সব মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে কেয়া-আরহাম ফাউন্ডেশনের নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক তোতা বলেন, ফাউন্ডেশনটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমরা সুমির বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ শুনেছি। আর আপনারা যে অভিযোগের বিষয়ে বলছেন, সেসব ঋণ এবং অগ্রিম অর্থ আদায়ের কার্যক্রম এই ফাউন্ডেশন এখনো হাতে নেয়নি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available