শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুর ভেদরগঞ্জের সখিপুর থানার ৪২নং তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা বেগমের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজ বাড়ির বাথরুম, থাকার রুম, বাগান পরিষ্কার করানোর অভিযোগ উঠেছে।
অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ দেন আফছানা বেগম নামে এক অভিভাবক।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক।
এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলমকে তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে গত ৬ আগস্ট বিদ্যালয়ের আট সদস্যের ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষক ফাতেমার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আরও একটি আবেদন করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন ২০০৯ সালে তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। এরপর থেকেই পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজ বাসার বাথরুম, বাসার রুম ঝাড়ু, বাগান-পানির টাংকি পরিষ্কার ও ঘর মুছার কাজ করান শিক্ষক ফাতেমা। এছাড়া স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ে দেরি করে আসা, শিক্ষার্থীদের কাছে বাধ্যতামূলক গাইড বই বিক্রি, পুরনো বই ফেরত নিয়ে বিক্রি করাসহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায়র অভিযোগ করা হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিসান, মোসকান, মিলন, সাফিয়া ও খালিদ হাসানসহ অন্য শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রাইভেট না পড়লে ও বাসার বাথরুম, বাসার রুম ঝাড়ু, বাগান-পানির টাংকি পরিষ্কার এবং ঘর না মুছলে ফেল করানোর ভয় দেখায় ফাতেমা ম্যাডাম। এছাড়া গাইড বই না কিনলে তিনি আমাদের বকাঝকা করেন। তাই ভয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া হয় না।
অভিভাবক তুলসি রানি বলেন, আমার ছেলে ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ছেলেকে দিয়ে বাথরুম, ঘর পরিষ্কার করিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি এমন হয়, তাহলে ছেলে কী শিখবে? এ ধরনের আচরণের জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এদিকে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগকরছে। এসব অভিযোগের সবই মিথ্যা ও বানোয়াট।
স্কুল কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা আমার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খারাপ ব্যবহার করেন। তার আচরণে সবাই বিরক্ত। তার কারণে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ২০০৯ সালে ফাতেমা খাতুন স্কুলের দায়িত্বে আসার পর থেকে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটিসহ এলাকার কোনো মানুষ তাকে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান না।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ. ছোবাহান মুন্সী বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের কাছে পাঠানো হবে। আর বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে খুব শিগগিরিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available