কক্সবাজার সদর প্রতিনিধি: সরকারি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আরও প্রায় ১মাস মাৎস শিকার বন্ধ ছিলো কক্সবাজার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে। কিন্তু ১৪ আগষ্ট থেকে আবহাওয়া স্বাভাকিক হওয়ায় পুনরায় মাছ শিকারে যাওয়া শুরু করেছে জেলেরা। প্রচুর ইলিশসহ অন্যান্য মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড়ছে অধিকাংশ ট্রলার। ঘাটে মাছের সরবরাহ বিশেষ করে ইলিশের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও দাম ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে।
স্থানীয়রা বলছে, পন্টুনে মাছ নামার সাথে-সাথেই বাইরের ব্যবসায়ীরা পরিবহণযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে। তাই স্থানীয়দের একরকম চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে ইলিশ।
১৮ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দেখা যায়, সাগর থেকে প্রচুর মাছ নিয়ে ফিরছে মাছের ট্রলারগুলো। প্রত্যেকটি ট্রলার থেকে ইলিশ নামানো হচ্ছে অবতরণ কেন্দ্রের পন্টুনে। ৩টি পন্টুনে ইলিশ রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ইলিশ রাখা হচ্ছে খোলা মাঠে। বেড়েছে বরফকল ও মৎস্য শ্রমিকদের ব্যস্ততা।
আল্লার দান নামের একটি ফিসিংবোটে কথা বলে জানা যায় ৮ দিনে তারা প্রায় ৬ হাজার ইলিশ শিকার করেছে। আকারভেদে একেকটি ইলিশের গড় ওজন ৯০০গ্রাম থেকে ১ কেজির মধ্যে। সব মিলিয়ে তাদের বিক্রি ৫০ লক্ষ টাকা। কমবেশি সবাই এমন মাছ পাচ্ছে বলে জানালেন আল্লার দান ফিসিং বোডের মাঝিমল্লারা।
ইলিশ শিকারের খবর শুনে ঘাটে মাছ কিনতে এসেছেন স্থানীয় টেকপাড়া এলাকার আনোয়ার, মামুন, হাবিবুর রহমানসহ তাদেরমত আরও অনেকেই। কথা হয় তাদের সাথেও। জানা যায় এবার ইলিশের আমদানি ভালো হলেও দাম তাদের সাধ্যের বাইরে। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই মাছ না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আব্দুর রহিম বলেন, শুক্রবার সকালে কমপক্ষে একশর বেশি ইলিশ ভর্তি ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে। প্রতিটি ট্রলারে ১ থেকে ৯ হাজার ইলিশ নিয়ে এসেছে। ১কেজি ওজেনের ১শ ইলিশ প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ৮শ থেকে ৯শ গ্রামের ইলিশ ৮০থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঘাটে ইলিশ বিক্রি করে পুনরায় ট্রলারে বরফ, খাদ্য, তেলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সাগরে পুনরায় ইলিশ শিকারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিসিং বোডগুলো।
মৎস্য ব্যবসায়ী ফারুক ভুট্টো বলেন, অবতরণ কেন্দ্রে প্রচুর ইলিশ, যার কারণে ইলিশের দাম একটু কমেছে । যেখানে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৩ দিন আগেও ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়। আর ৭০০-৮০০ গ্রাম প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশের দাম কমেছে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।
সরজমিনে দেখা যায়, পন্টুনে স্তুপ করে রাখা ইলিশগুলো আকারভেদে আলাদা করা হচ্ছে। এরপর দ্রুত ইলিশের ওপর দেয়া হচ্ছে বরফ। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী ইলিশের ওজন করে কর্কশীটের বাক্সে ভরে পরিবহণ যোগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার প্রতিটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এসময় ব্যবসায়ী ছাড়াও ঘাটে স্থানীয় অনেকেই শখ করে মাছ কিনতে দেখা গেছে।
আরেক ব্যবসায়ী জানেআলম বলেন, ইলিশের চাহিদা বেশি, তাই দ্রুত ট্রলার থেকে ইলিশ কিনে তা বরফ দিয়ে প্যাকেট ভরে ট্রাক তোলা হচ্ছে। এরপর দ্রুত ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। মোটামুটি ইলিশের ব্যবসা এখন চাঙ্গা।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ বদরুদ্দৌজা বলেন, গত ৩দিনের কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রায় ১০০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ এসেছে। আর শুক্রবার একদিনেই প্রায় ৭০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ সরবরাহ হয়েছে। এতে সরকারিভাবে ৬৫দিন বন্ধ থাকায় মৎস্য সংশ্লিষ্টরা যে কষ্টের মধ্যদিয়ে গেছে তা সার্থক হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট থেকে সাগরে মাছ শিকার শেষে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে জেলেরা। প্রতিদিনই ইলিশের সরবরাহ বাড়ছে, আশা করছি ইলিশের অবতরণ এভাবে অব্যাহত থাকলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব খুবই অল্প সময়ের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available