কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাবকী আদর্শ গ্রামের পুকুর খনন ও মাটি ভরাটের কাজের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারা। মাটি ভরাটের কাজটি দায়সারাভাবে করে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন বলে তাদের দাবি। দক্ষিণ ভাবকী আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারা তাদের কাজে সন্তুষ্ট না হয়ে ৯ আগস্ট ৪১ জনের সাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগপত্র জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বরাবরে জমা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দ হিসাবে এই প্রকল্পটি দেয়া হয়েছিল।
এই প্রকল্পের সভাপতি আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আকবর বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে।
মুঠোফোনে এই প্রকল্পের বিষয়ে আহম্মেদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি আমাকে এই প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে। তবে আমি কাজটি করিনি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ভালো বলতে পারবেন। তিনি নিজেই প্রকল্পের কাজটি তত্ত্বাবধান করেছেন। শুনেছি, বৃষ্টির কারণে কাজটি শেষ করতে পারেননি। শুষ্ক আবহাওয়ায় আবার কাজ করবেন। আর এ বিষয়ে পিআইও, ইউএনও স্যার, ডিসি স্যার জানেন।’
এদিকে, দক্ষিণ ভাবকী আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারাও কাজটি পিআইও করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে পিআইও নিজে প্রকল্পের কাজ করার কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, ‘পিআইওর কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।’
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, দক্ষিণ ভাবকী আদর্শ গ্রামে পুকুর খনন ও মাটি ভরাটের জন্য চাল-গম বরাদ্দ দেয়া হয়। পুকুর খনন ও মাটি ভরাটের কাজ না করে বরাদ্দ হওয়া গম-চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। কালাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কাছে তারা এ প্রকল্পের তথ্য জানতে চান। কিন্তু পিআইও তাদের কোনো তথ্য জানাননি। তারা জেলা প্রশাসককে প্রকল্পটি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কালাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিশেষ বরাদ্দের কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ২০ দশমিক ৩৪০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ২১ জুন কাজটি শুরু হয়। ১ আগস্ট কাজটি শেষ করার মেয়াদ ছিল। এর মধ্যে ১০-১২ দিন কাজ বন্ধ ছিল।
দক্ষিণ ভাবকী আদর্শ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের পুকুরটি খনন করা হয়েছে। পুকুরের পাড় ঠিকমতো বাঁধাই করা হয়নি। মাটিগুলো একটু বৃষ্টিতেই ধসে পড়ে যাচ্ছে। পাড়ের পশ্চিম দিকে মাটি ভরাটের কাজটি দায়সারাভাবে করা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান।
ভাবকী আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা মাহফুজা খাতুন বলেন, ‘পুকুর খনন ও মাটি ভরাটের নামে অনিয়ম করা হয়েছে। কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ আগে কাজ শুরু করলেও ঈদের পরে দুই সপ্তাহ কাজ বন্ধ ছিল। গত ২ আগস্ট বুধবার পিআইও এসে বলেন, কাজ শেষ, আর কাজ হবে না। পরের দিন বৃহস্পতিবার পুকুর থেকে ভেকু তুলে নিয়ে চলে যান। কেউ আমাদের কথা শোনেন না।’
দক্ষিণ ভাবকী আদর্শ গ্রাম সমবায় সমিতির সভাপতি সফির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের পুকুর খননের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। খননযন্ত্র দিয়ে যেনতেনভাবে পুকুর খনন করা হয়। পুকুর পাড় মাটি দিয়ে বাঁধাই করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। কাজ শেষ না করেই বরাদ্দের পুরো খাদ্যশস্য উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কাগজ-কলমে প্রকল্পে একজনের নাম থাকলেও পিআইও সাহেব নিজেই কাজটি করেছেন। আমরা তদন্ত চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
ক্ষেতলাল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমীন পাপন কালাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। গত ১৩ আগস্ট রোববার বিকেলে ক্ষেতলাল কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তার উপর আরোপিত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন ‘কাজটি ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা করেছেন। পিআইওর কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ বরাদ্দকৃত কাজ। এ কারণে গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করা হয়েছে। এ ছাড়া কাজটি এখনো শেষ করা হয়নি। শুষ্ক আবহাওয়া হলেই আবার কাজ শুরু হবে। গ্রামবাসীর অভিযোগ সঠিক নয়।’
অভিযোগ পত্র দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, ‘একটা অভিযোগ এসেছে। ইউএনও কালাইকে অবগত করা হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার কারণে কাজ মাঝপথে সাময়িক বন্ধ আছে বলে ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন। আবহাওয়া ভালো হলে কাজ শুরু হবে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available