ফয়সাল আজম অপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শুধু কষ্টেই কেটেছে। জমিজমা বাড়ি কিছুই ছিল না। পথে পথে ছোট পরিসরে ডাবের ব্যবসা করতাম। নিজের টাকা ছিল না। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে কিস্তিতে টাকা তুলে ভ্যান কিনেছিলাম, সে ভ্যানটিই ছিল আমার সবকিছু। কোনদিন ভাবতেই পারিনি যে সেমি পাকা বাড়িতে থাকতে পারবো। যা সম্ভব হয়েছে অসহায় বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কারণে।
কথাগুলো বললেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তর্ত্তীপুরের আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আলিয়া বেগম। তিনি আরো বলেন, রাস্তা হলে আর বখাটেদের উৎপাত কমলে নিজেই ভ্যান চালিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো। জোহরা বেগম জানান, যা কল্পনাও করিনি তা বাস্তবে পেয়েছি। এখন শুধু জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী ছেলেটিকে মানুষ করতে পারলেই মনের সব আশা পূরণ হবে। কিন্তু অর্থের অভাবে তা পারিনি। শুধু এই দুইজনই নয়, এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় দুশো পরিবারের লোকজনের মুখেও এমন কথা শোনা যায়।
১৮ আগস্ট শুক্রবার সরজমিনে তর্ত্তীপুর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এলাকায় গেলে তারা এ প্রতিবেদকে এভাবেই তাদের অনুভূতির কথা জানান। এখানকার দুলিয়ারা বেগম ও কবিতা বেগম বলেন, আমাদের এখানে দুই সারি বাড়ির মধ্যখানে প্রায় ছয় ফুট করে রাস্তার জন্য জায়গা রাখা আছে। কিন্তু সংস্কার না করায় যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্বামী পরিত্যক্ত রোকিয়া বেগম জানান, গভীর রাতে বখাটেরা আমাদের ঘরের দুয়ারের সামনে এসে আজেবাজে কথা বলে। ভয় লাগে, তাই দরজা খুলি না । ভিতর থেকে প্রতিবাদ করলে তারা হুমমি দেয়।
নুরেশা বেগমের দাবি, বাড়ির উঠানে ছোট পরিসরে সবজি বাগানের জন্য কৃষি অফিসের সাহায্য ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের জন্য ইউএনও স্যারের সহযোগিতা চাই। এখানকার প্রায় সবার দাবি একটাই, রাস্তা, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। রানীহাটি কলেজের সামনের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আদরী সরকার, টকিয়ারা বেগম, পার্বতী, ফজর আলী, কুলসুম বেগম, শ্রীমতি মায়ারানী জানান, আমরা পথে বাস করতাম, বৃষ্টিতে ভিজতাম, রোদে পুড়তাম, মা শেখ হাসিনা থাকার জন্য জমিসহ বাড়ি করে দিয়েছেন।
আমরা আশাবাদী, তার নির্দেশে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কুটির শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতাদের উৎখাত ও রাস্তার ব্যবস্থা করে দেবেন, এটাই আমাদের চাওয়া। ষষ্ঠী ঘোস ও রাসেল বলেন, গুচ্ছগ্রামের মধ্যে আমরা পুকুরে মাছ চাষ করতে পারলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আসবে, অন্যদিকে আমাদের কর্মসংস্থান হবে। তারা আরো বলেন, যদিও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এর আওয়াতায় পড়ে না তবে আমরা নিজ উদ্যেগে অস্থায়ী ভিত্তিত মসজিদ মন্দির তৈরি করেছি। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সহযোগিতা পেলে ভালো হতো।
কানসাটের সাথী বেগম বলেন, আমাদের কানসাটের আশ্রয়ন প্রকল্পের দুই সারির বাড়ির মধ্যে যে প্রায় ছয় ফুট করে রাস্তা ছাড়া আছে, সেখানে দীর্ঘদিন যাবত পানি জমে থাকায় আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আব্দুল মালেকসহ অনেকেই জানান, বাধ্য হয়ে পচা ও দুর্গন্ধে ভরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে হাত পায়ে ঘা, চুলকানী, টায়ফয়েড, জ্বর সর্দি-কাশিসহ নানা অসুখে ভুগছি।
অন্যদিকে মনাকষার ভবানীপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা একরাম আলি জানান, নানা সমস্যায় অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি বদলের জন্য প্রায় তিন মাস আগে এমপির সুপারিশ নিয়ে ইউএনও'র কাছে আবেদন করেও লাভ হয়নি। সামনে মাত্র চার ফুট রাস্তা আছে, যাতে চলাফেরা করা অসম্ভব । উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ২ এর ১১৮৮ এবং গুচ্ছ গ্রামের ১৩০টি পরিবার জননেত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি পেয়ে খুব খুশি ও অনেকটা শান্তিতে থাকলেও কর্মসংস্থান, বখাটেদের উৎপাত বন্ধ, রাস্তা সংস্কার ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়ির রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য ছক তৈরি কর পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হবে। তিনি আরো বলেন, সমবায় সমিতি অফিসের মাধ্যমে সমিতি করা হয়েছে। তাদের মাঝে ক্ষুদ্র লোনের ব্যবস্থা করে কর্মসংস্থান করা হবে।
শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে ও থাকবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, বাড়ির উঠানে সবজি বাগান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই রাস্তার সংস্কার করা হবে। এক কথায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আশ্রয়ন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামবাসীদের জীবন ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজানো হবে। বখাটেদের উৎপাত কমানোর জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল জানান, অসহায় বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নই হলো আশ্রয়নবাসীদের মুখে হাসি ফুটানো। তা বাস্তবায়নে জরুরি ভিত্তিতে সব কিছু করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available