নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: সারাদেশের ন্যায় ঢাকার নবাবগঞ্জেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাসায় থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে এবার।
রাজধানীর একেবারেই নিকটবর্তী এলাকা ঢাকার নবাবগঞ্জে গেল কয়েক সপ্তাহে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জ্বর-ঠান্ডা, কাশি নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন অনেক রোগী।
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গুর ২০ শয্যা কর্নারে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন ১৮ জন। প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন, আবার সুস্থ হয়ে অনেকে চলেও যাচ্ছেন।
এছাড়া অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত দু’মাসে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫০ জনেরও বেশি৷
চিকিৎসকরা বলছেন, এখনো বৃষ্টির মৌসুম শেষ হয়েনি। বৃষ্টি হলে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি দীর্ঘদিন জমে থাকায় সেখানে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা বংশবিস্তার করে। সচেতনতার অভাবে দিনদিন এর প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই সবাইকে হাসপাতালে এসে পরামর্শ নেয়ার পাশাপাশি সচেতন হওয়ার কথা জানিয়েছেন এখানকার চিকিৎসকরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ঢাকা মহানগরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিনই সেখানে ডেঙ্গুর কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন অনেক রোগী মারাও যাচ্ছে। যেহেতু নবাবগঞ্জ রাজধানী শহরের পাশে ঢাকার একটি উপজেলা, তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখানকার বাসিন্দাদের বেশি সচেতন হতে হবে।
যারা প্রতিনিয়ত রাজধানী শহরে যাতায়াত করেন তাদেরকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ না হলেও, শহরে যাতায়াতের কারণে ওখান থেকে এডিস মশার কামড় খেয়ে এখানে এসে বেশিরভাগ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। পরবর্তীতে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। গেল মাসে নবাবগঞ্জের গালিমপুর এলাকার এক ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হরগোবিন্দ সরকার অনুপ এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, গত এক মাস ধরে বেশিরভাগ রোগী জ্বর, শরীর ব্যথা ও কাশির সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। বর্তমান সারাদেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবাবগঞ্জ এলাকাটি রাজধানী শহরের খুব নিকটবর্তী একটি উপজেলা। তাই এখানেও ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ময়লা-আবর্জনা ও পচা পানি থেকে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা বেশি বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টি হলে বাড়ির উঠান বা ছাদে, কোনো পাত্র বা গর্তে জমে থাকা পানি সরিয়ে দিতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধসহ রোগীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, প্রতিদিন ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে রোগীরা আসছেন হাসপাতালে। ডেঙ্গু পরীক্ষা দিলে এদের মধ্যে দু-চারজন পজেটিভ আসে। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। যাদের মধ্যে বেশি ঝুঁকির লক্ষণ পাওয়া যায়, তাদেরকে ভর্তি রাখা হচ্ছে। যাদের ঝুঁকি কম বা প্রাপ্ত বয়স্ক তাদেরকে ওষুধ দেওয়ার পর বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির মৌসুম যেহেতু শেষ হয়নি তাই নবাবগঞ্জবাসীকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বাড়িতে বা আশপাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকলে সেই পানিতে এডিস মশা ডিম ছাড়ে। সেই ডিম থেকে দুদিনের মধ্যে বাচ্চা বের হয়। সেগুলো মানুষের শরীরে কামড় দিলে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি মশা নিধনের জন্য প্রতিনিয়ত বাড়ির উঠান ও আশপাশে স্প্রে করতে হবে। ঘুমানোর আগে ঘরের ভেতর স্প্রে করে মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফুলহাতা জামাকাপড় পরতে হবে। জ্বর ঠান্ডা- কাশি বা শরীর ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available