মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: দীর্ঘ ২০ বছর মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চাঞ্চল্যকর রুবেল হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ওমর আলীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাকে সিংগাইর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেফতার রুবেল সিংগাইর উপজেলার সামছুল হকের ছেলে।
২৭ আগস্ট রোববার সকাল ১০টার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৪, সিপিসি-৩-এর কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার এম আরিফ হোসেন। এর আগে ২৬ আগস্ট শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে সাভার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, ওমর আলী ও ভিকটিম রুবেল একই এলাকায় বসবাস করতেন। ভিকটিম রুবেলের বাবা সামছুল হকের সঙ্গে আগে থেকেই জমি-জমা নিয়ে ওমর আলীর বিরোধ ছিল। ২০০১ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে জমির চাষাবাদকে কেন্দ্র করে ভিকটিম রুবেল ও ভিকটিমের বাবা সামছুল হকের সঙ্গে ওমর আলীর কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। বিরোধের জের ধরে ২০০১ সালের ২৬ এপ্রিল রুবেলকে রওশন আলীর মাঠে একা পেয়ে পূর্ব থেকে ওঁতপেতে থাকা ওমর আলী ও তার সহযোগী ইব্রাহিম, রাজ্জাক, হানিফসহ অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজন মিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভিকটিম রুবেলকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে তার মরদেহ ওই মাঠের দক্ষিণ পাশের নালায় বস্তায় বেধে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
ভিকটিমের বাবা সামছুল হক তার ছেলেকে কোথায় খুঁজে না পেয়ে সিংগাইর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করেন। পরে ভিকটিমের বাবা জানতে পারে যে, সিংগাইরের ধল্যা ইউনিয়নের গাজিন্দা গ্রামে রওশন আলীর মাঠের দক্ষিণ পাশের নালার মধ্যে বস্তা ভর্তি একটি মরদেহ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে সামছুল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত মরদেহটি তার ছেলে রুবেলের বলে শনাক্ত করে। স্থানীয়রা সিংগাইর থানা পুলিশকে খবর দিলে মরদেহটি নালা থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ভিকটিমের বাবা সামছুল হক বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় ওমর আলী ও তার সহযোগী ইব্রাহিম, রাজ্জাক, হানিফসহ অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা হওয়ার পর আসামি ওমর আলী ও তার সহযোগী হত্যাকারী ইব্রাহিম, রাজ্জাক এবং হানিফকে সিংগাইর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার আসামীরা ১৭ মাস কারাবাস শেষে জামিনে মুক্তি পায়। আসামি ওমর আলী জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ওমর আলী, ইব্রাহিম, রাজ্জাক এবং হানিফদেরকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। পরবর্তীতে চার্জশীটের ভিত্তিতে আদালত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন। পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম রুবেল হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামি ওমর আলীকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন এবং অপর আসামী ইব্রাহিম, রাজ্জাক ও হানিফকে মামলা থেকে খালাশ প্রদান করেন।
লে. কমান্ডার এম আরিফ হোসেন জানান, পলাতক আসামি ওমর আলী মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গত ২০ বছর যাবৎ পলাতক ছিলেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষে ওমর আলী এলাকা থেকে পালিয়ে ঢাকার সাভার এলাকায় চলে যায়। গত ২০ বছর ধরে আসামি ওমর আলী ঢাকা জেলার আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে আত্মগোপনে থেকে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার আসামিকে সিংগাইর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available