গাজীপুর প্রতিনিধি: সন্তানের জন্য পরম আদর্শ আর নির্ভরতার অন্য নাম বাবা। বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে আমাদের আগলে রাখেন আমৃত্যু। বাবাদের ভালোবাসা মায়ের মতো প্রকাশিত হয় না। নিজের সুখ বিলিয়ে দিয়ে তাঁরা সন্তানের সুখ কেনেন। অথচ, জীবনের পড়ন্ত বিকেলে সন্তানের কাছে হয়ে ওঠেন বোঝা, বাড়তি ঝামেলা। এমনকি শেষ আশ্রয়স্থল হয় যখন বৃদ্ধাশ্রম, তখন নিশ্চয় এমন মন্তব্য শুনলে অবাক হব না!
এমন একজন হতভাগা বাবা ইকবাল আহমেদ। পেশায় তিনি আইনজীবী। দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এই পেশায়। এখন জীবনের শেষ সময়ে এসে ঘর-পরিবার ছাড়া প্রবীণ নিবাসে সময় কাটবে, এমন জীবন কখনো তিনি প্রত্যাশা করেননি। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাকে আজকে এই প্রবীণ নিবাসে এনে দাঁড় করিয়েছে।
প্রবীণ নিবাসের পূর্ব পাশের রাস্তার কংক্রিটের চেয়ারে বসে কথা হয় এই হতভাগা পিতা ইকবাল আহমেদের সাথে। তিনি জানান তাঁর করুণ কাহিনী। পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। সংসারে ছিল স্ত্রী ও ৩ ছেলে। হঠাৎ এক রাতে অসুস্থ হয়ে যান। এই অসুস্থতাই যেন কাল হয়ে উঠে তাঁর। চিকিৎসার টাকা জোগান না দিয়ে সন্তানরা বাবাকে করেছেন অত্যাচার। প্রিয় সন্তানদের এমন অচেনা আচরণ কোনভাবেই বাবার হৃদয় মেনে নেয়নি। সেই অভিমান থেকে পরিবার ছেড়ে সত্তরোর্ধ্ব ইকবাল হোসেন সংসার পেতেছেন গাজীপুরের এই প্রবীণ নিবাসে।
প্রবীণ নিবাসের আরেক বাসিন্দা মকবোল হোসেন। তাঁর গল্পটা ভিন্ন হলেও ইকবাল আহমেদের মতো অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মকর্তারও ঠাঁই হয়েছে একই বৃদ্ধাশ্রমে। চাকরি জীবনে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে অবসরে গিয়ে পরিবারের সাথে জীবনের বাকি সময়টা কাটাবেন বলে ভেবেছিলেন। তবে এখন সময় কাটাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু পরিবারের সাথে নয়, প্রবীণ নিবাসে প্রবীণদের সাথে। তাঁর ভাগ্য এতোটাই করুণ যে, অবসর ভাতার প্রায় ২০ লাখ টাকা তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে সন্তানরা। সেই কষ্টে সেদিন রাতেই প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় চলে আসেন এই প্রবীণ নিবাসে। জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দিতে চান এখানেই। এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।
ইকবাল আহমেদ, মকবোল হোসেনসহ নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২ শতাধিক প্রবীণ এই প্রবীণ নিবাসে থাকেন। গ্রিভেন্সী গ্রুপের মালিক খতিব মকুল এই প্রবীণ নিবাস গড়ে তুলেছেন। এখানে সম্পূর্ণ ফ্রিতে প্রবীণদের রাখা হয়। গভীর সবুজ বনাঞ্চলে ঘেরা প্রকৃতির সাথে সময় কাটছে প্রবীণদের।
প্রবীণ নিবাসের ব্যবস্থাপক মো.জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখানকার প্রবীণদের সন্তান আর পরিবারকে ভুলিয়ে রেখে যতটা সম্ভব পরিবারের মতই আনন্দ দেয়া যায়, তার কোনো কমতি রাখেন না তাঁরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available