বরিশাল প্রতিনিধি: বরিশালে ইলিশের দাম এখনও নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। বরিশালের পোর্ট রোড ইলিশ যেখানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মণ ইলিশ আসতো সেখানে মাত্র একশ থেকে দেড়শ’ মণ ইলিশ আসছে। এদিকে ইলিশ সংকটকে পুঁজি করে দেশের জাতীয় মাছের দামও আকাশচুম্বী। এর থেকে পরিত্রাণে ভোক্তা অধিকারকে অভিযানের অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
বরিশাল পোর্ট রোডে মাছ কিনতে আসা মো. লিটন মোল্লা জানান, তিনি ইলিশ মাছ কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু দাম শুনে তার পক্ষে ইলিশ কেনা সম্ভব হয়নি। কারণ, ইলিশের দাম এত বেড়েছে যে তার মাসিক আয়ের দ্বারা এখন আর ইলিশ মাছ কেনা সম্ভব না। ইলিশ এখন বিত্তবানদের মাছ। এ কারণে ইলিশের দামও জিজ্ঞাসা করতে ভয় হয়। তবে পোর্ট রোডে সাগরের অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা কম হওয়ায় ক্রেতারা সেদিকেই ঝুঁকছেন। তিনি আরও বলেন, ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকার জাটকা নিধন ও মা ইলিশ রক্ষায় নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিলেও তাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন ইলিশ কিনতে পারছে না। জাটকা ও মা ইলিশ নিধন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে ইলিশের সংকট দেখা দেয়ায় বরিশাল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ইলিশের মোকাম।
ট্রলার মালিক শংকর বলেন, আগে একটি ট্রলার মাছ শিকারে গেলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হতো। এখন সেখানে চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। ডিজেলের দাম বেড়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে শ্রমিকের মূল্যও। ফলে ইলিশের দাম আগের তুলনায় একটু বেশি।
আড়তদার জহির সিকদার জানান, শনিবার পাইকারি বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে এক লাখ টাকা দরে। এক কেজি ওজনের মণ ৬৪ হাজার, এলসি ৫২ হাজার, ভেলকা ৪৪ হাজার ও ছোট সাইজের (জাটকা) ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার টাকায়। যা খুচরা বাজারে আরও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত বছর ভরা মৌসুমে মোকামে গড়ে ইলিশ এসেছে ৮০০ থেকে এক হাজার মণ করে। অথচ, এবছর ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে নগরীর পোর্ট রোডের মোকামে তেমন একটা ইলিশের দেখা মিলছে না। প্রতিদিন গড়ে একশ’ মণ ইলিশ আসছে। মাঝেমধ্যে দেড়শ’ মণ আসছে। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ ইলিশ সাগরের। নদীর মাছ তেমন একটা নেই বললেই চলে। এতে ব্যবসায়িকভাবে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন পোর্ট রোডের আড়তদাররা।
ইলিশ সংকটের কারণে বরিশাল পোর্ট রোডের ইলিশের আড়তদাররা এখন বিকল্প হিসেবে পাথরঘাটা, কুয়াকাটা, মহিপুর, ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানে আড়ত খোলার চেষ্টা করছেন। যেসব স্থানে সাগরের মাছ যাচ্ছে সেসব স্থান আড়তদাররা নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার চিন্তা করছেন।
পোর্ট রোডের আড়তদার রবিন সেন জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি ইলিশের ব্যবসা করে আসছেন। নদীতে তেমন ইলিশ না মিললেও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলছে। কিন্তু সে ইলিশ পোর্ট রোড মোকামে তেমন আসছে না। পূর্বে বরিশাল বিভাগে হাতেগোনা কয়েকজন আড়তদার ছিলেন। এ কারণে জেলেরা ইলিশ শিকার করে তাদের কাছে চলে আসতেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের কারণে এখন সাগর ও নদীর বিভিন্ন স্পটে মোকাম সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকযোগে ইলিশ চলে যাচ্ছে। পূর্বে ইলিশ মোকাম থেকে ১৮ থেকে ২০টি ট্রাকযোগে ইলিশ পাঠানো হতো দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একটি ট্রাকে ২০০ মণ মাছ উঠতো। প্রতিদিন ইলিশ আসতো তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মণ। এখন সেখানে দেড়শ’ মণ ইলিশ আসছে। ইলিশের সংকট এবং ইলিশ শিকার ও মোকামে শ্রমিকদের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে ইলিশের।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, কিছু দিনের মধ্যেই নদীতে ইলিশ আসা শুরু করবে। সাধারণত মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সাগর থেকে মিঠা পানিতে এসে থাকে। নদীর মোহনায় এত পরিমাণে জাল পেতে রাখে যে, সেসব জাল এড়িয়ে সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে পারে না। তাছাড়া সাগরের বিভিন্ন স্পটে ইলিশ মোকাম গড়ে তোলার কারণে পোর্ট রোডের মোকামে ইলিশ কম আসছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণে ইলিশ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available