খুলনা প্রতিনিধি: ঘুরে বেড়ান রাস্তায় রাস্তায়। থাকেন ফুটপাতে, এখানে-সেখানে। বলতে পারেন না নিজের নাম-পরিচয়। এমনই এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু এখন জানা যায়নি ওই সন্তানের বাবার পরিচয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে স্টেশনের এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মে স্থানীয়রা দেখতে পান মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীর প্রসব বেদনা উঠেছে। সন্তানসম্ভবা ওই পাগলির প্রসব বেদনার গগণবিদারী চিৎকার, ভারি করে তুলছিল খুলনা রেলস্টেশন এলাকা। দ্রুত তারা স্থানীয় এক ধাত্রীকে খবর দেয়। তিনি আসার পর স্টেশন মাস্টারের কক্ষের সামনেই ওই নারী ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।
খবর পেয়ে অনেকেই দেখতে এসেছেন পাগলি মা ও বাচ্চা শিশুটিকে। পাগলি ছেলে সন্তানের মা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পৃথিবীর আলো দেখা এই ফুটফুটে শিশুর বাবা কে? এটাই এখন সবার প্রশ্ন। এদিকে ওই নারী নিজের নাম-পরিচয়ই বলতে পারেন না।
মা ও নবজাতক শিশুটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে নগরীর নিরালাস্থ সেবার আলো সুখের নীড় বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন। সেখানে বাচ্চা ও মায়ের সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করছেন খুলনা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবীরা।
সেবার আলো সুখের নীড় বৃদ্ধাশ্রমে থাকা পরিবারহীন মায়েরা জানান, এখানে আমরা মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী ও নবজাতক শিশুটির দেখাশোনা করছি। শিশুটিকে খাওয়ানো গোসল করানও সবই করছি আমরা। শিশুটিকে পেয়ে আমরা সবাই খুশি। নিজের নাতির মত করে তাকে আদর-যত্ন করছি।
সেবার আলো সুখের নীড় বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক আবু তালহা যুবায়ের বলেন, ফুটফুটে এই বাচ্চাকে পেয়ে আনন্দে তার সাথে সময় পার করছেন সেবার আলো সুখের নীড় বৃদ্ধাশ্রমে থাকা পরিবারহীন মায়েরা। তারা যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছে।
খুলনা ফুড ও ব্লাড ব্যাংকের মডারেটর কমলেশ বাছাড় বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী প্রসববেদনায় ছটফট করতে থাকলে ডা. লায়লা ইয়াসমিনের তত্ত্বাবধায়নে ঐদিন সকালে রেলওয়ে স্টেশনে নরমালে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে খুলনা রেলস্টেশন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ডা. লায়লা ইয়াসমিন বাচ্চাটিকে মানবিক সংগঠন খুলনা ফুড ও ব্লাড ব্যাংকের সদস্যদের কাছে দিলে ঐ সংগঠনের অ্যাম্বুলেন্সে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শেষে নগরীর সেবার আলো সুখের নীড় বৃদ্ধাশ্রমে রাখা হয় এবং বাচ্চা ও মায়ের সার্বক্ষণিক পাশেন আছে খুলনা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবীরা।
খুলনা ফুড ও ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সালেহ উদ্দিন সবুজ বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর বয়স আনুমানিক ২৮ বছর হবে। তিনি কোনও কথাই বলেন না। অনেক চেষ্টা করেও কিছুই জানতে পারিনি। বাচ্চা ও মায়ের সার্বক্ষণিক পাশে আছে খুলনা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবীরা। যেহেতু মা একেবারে মানসিক ভারসাম্যহীন, তাই যথাযথ আইন-কানুন মেনে বাচ্চাটিকে দত্তক দেওয়ার চেষ্টা করছেন মানবিক সংগঠন খুলনা ফুড ও ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবীরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available