ফকির মিরাজ আলী শেখ, মুকসুদপুর থেকে: নাম মোহাম্মদ ইয়াকুব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত মেজর (অব.) ইয়াকুব ৮১ বছর বয়সে নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ঢাকার ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছেন।
১৯৪৩ সালের ২৬ মার্চ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পশ্চিম নওখন্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মেজর ইয়াকুব।
তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন থাকাকালীন পাকিস্তানে বাংলাদেশি অফিসারদের দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং বিবিসির খবর বাঙালি অফিসারদের জানিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ায় সহায়তা করেন।
কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে থাকায় ও পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক অফিসারকে গুরুতর আহত করার অভিযোগে করাচিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কারাবন্দি হন তিনি। এর ফরে সরাসরি দেশে এসে যুদ্ধ করার সুযোগ হয়নি মেজর ইয়াকুবের। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর পুলিশ প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিপদগামী কিছু সেনাসদস্যের বিদ্রোহের আশঙ্কার খবর জানতে পেরে কর্নেল শওকত আলীর নেতৃত্বে মেজর ইয়াকুবসহ একটি ব্যাটালিয়ন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার আগে তাকে অবগত করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কর্নেল শওকত ও অধিনায়ক মেজর ইয়াকুব বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ৮টা ১মিনিটে যুদ্ধ যেতে আদেশ চেয়েছিলো তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহর কাছে। কিন্তু জেনারেল শফিউল্লাহ জানিয়েছিলেন, মেজর ডালিম তাকে বঙ্গভবনে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। তাই সে কোনো আদেশ দেননি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার বিশস্ত সেনা কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের আইনবহির্ভূত বাধ্যতামূলক ও বরখাস্তের শিকার হয়ে অবসরে যান মেজর ইয়াকুব।
১৯৭৭ সালে হ্যাঁ বা না ভোটে মেজর ইয়াকুব জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে গিয়ে না ভোট দিয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। এছাড়াও ১৯৭৮ সালে সাজেদা চৌধুরী, ড. কামালসহ ৫১ জন ব্যক্তি ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সর্বপ্রথম ঢাকা থেকে লঞ্চ যোগে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করেন।
১৯৮০ সালে মেজর ইয়াকুব (অব.) রাজনীতিতে যোগ দেন। আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে বাকশাল তৈরি করেন এবং মেজর ইয়াকুব (অব.) বাকশাল দ্বিতীয় দফা পুনর্গঠন করেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন।
১৯৮১ সালের ১৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ঢাকার সাবেক মেয়র মো. হানিফের সঙ্গে ছিলেন মেজর ইয়াকুব।
এলাকার শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব ঘোচাতে কর্মের ব্যবস্থায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন মেজর ইয়াকুব।
এছাড়াও গ্রামের উন্নয়নে নূর এ মদিনা মাদ্রাসা ও এতিমখানা, নূর এ মদিনা জামে মসজিদ, মেজর ইয়াকুব স্মৃতি গণগ্রন্থাগার, মেজর ইয়াকুব কমিউনিটি ক্লিনিক, কবরস্থানসহ বেশ কয়েকটি রাস্তা তৈরি করেছেন তিনি।
বর্তমানে মেজর (অব.) মুহাম্মদ ইয়াকুব তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধে জীবনযাপন করছেন। শেষ বয়সে এসে তার এখন একমাত্র আশা, জিয়াউর রহমানের আইনবহির্ভূত বাধ্যতামূলক ও বরখাস্ত হওয়ার অপমান থেকে মুক্ত হয়ে লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি পাওয়া। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াকুব।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available