রাঙামাটি প্রতিনিধি: টানা বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়ছেই। গত এক সপ্তাহে হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদ সংলগ্ন নিন্মঞ্চল এবং অন্যান্য উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় চরম কষ্টে দিনানিপাত করছে। বেকায়দায় পড়েছে স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
চরম বিপাকে পড়েছে গৃহপালিত গরু, ছাগল, হাস মুরগি পালনকারী খামারিরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। বাসা-বাড়িতে এক সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে পানি আটকে থাকায় সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
কাপ্তাই হ্রদে আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে রাঙামাটি শহরের হ্রদসংলগ্ন এলাকাগুলোসহ বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, জুড়াছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বিপুল পরিমাণ ফলসী জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এনডিসি ও জেলার ভারপ্রাপ্ত ত্রাণ কর্মকর্তা এনামুল হাসান জানিয়েছেন, রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধিতে আনুমানিক ১০ হাজার ৩৯৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাঙামাটি জেলার সদর, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও জুরাছড়ির এই চারটি উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নের ১৫৫টি গ্রাম, তিনটি মাধ্যমিক ও ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭৩টি সড়ক, চারটি বাজার আকস্মিক বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ২৫ মেট্রিক টন চাউল, নগদ চার লাখ টাকা প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত ত্রাণ কর্মকর্তা এনামুল হাসান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে পানি রয়েছে ১০৮.৩৮ ফুট এমএসএল। হ্রদে পানি ধারণ সক্ষমতা রয়েছে সর্বোচ্চ ১০৯ ফুট এমএসএল পর্যন্ত। কিন্তু ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের পর অদ্যাবদি কাপ্তাই হ্রদে কোনো ধরনের ড্রেজিং না হওয়ায় হ্রদের পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। এতে করে প্রতিবছরই কাপ্তাই হ্রদের তীরে বসবাসরত ১০ থেকে ১৫ হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়।
২০ সেপ্টেম্বর বুধবার সারাদিনই কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়েগুলো বন্ধ রাখায় হু-হু করে পানি বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে লাগাতার কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা করেও কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আব্দুজ্জাহের এর মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত দুটো মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ রিং হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে স্বয়ং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও চরমভাবে বিরক্ত বলে জানিয়েছেন একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available