মেহেরপুর প্রতিনিধি: ডেঙ্গুর কাছে পরাজিত এক অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী যমুনা খাতুন অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে। আর সেই সাথে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো দিন মজুর পিতা-মাতার সব স্বপ্ন।
গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামের দিন মজুর আমিরুল ইসলামের মেয়ে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি নার্সিংয়ের ছাত্রী যমুনা খাতুন সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েও ওঠেন। ডেঙ্গু পরবর্তী সময়ে তার শরীরে দেখা দেয় নানা উপসর্গ। এক পর্যায়ে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন যমুনা। কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে চলে যান না ফেরার দেশে।
যমুনা খাতুনের মা সুখি খাতুন বলেন, দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে আমার সংসার চলে। চরম অভাব বলতে যেটা বোঝায় আমার সংসারে সেটা আছে। অভাবের মধ্য দিয়েই চলে দিন। এত কিছুর মধ্য দিয়েও মেয়ে যমুনার অদম্য ইচ্ছায় এসএসসি এবং এইচএসসিতে কৃতিত্বের সাথে জিপিএ ফাইভ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ২০২২ সালে মেধা তালিকায় ১৩তম স্থান পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি নার্সিংয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। তখন থেকেই যমুনাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল।
প্রতিবেশী এনামুল হক এনাম বলেন, আমার প্রতিবেশী হওয়ায় তাদের পরিবারের আর্থিক দৈন্যের কথা আমার সাথে সবই শেয়ার করতেন তার বাবা-মা। আমিও তাদের সাহস যোগাতাম। যমুনা খাতুন তার বাবা-মাকে বলতেন, তোমরা আর কয়েকটি বছর ধৈর্য্য ধরো। আমি নার্সিংয়েও ভালো রেজাল্ট করবো। তখন তোমাদের দুঃখ-কষ্ট সব শেষ হয়ে যাবে। পিতা-মাতাও আশায় বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু সর্বনাশা ডেঙ্গু তাদের সব আশা ভেঙ্গে চুরমার করে দিল।
ঢাকা থেকে আসা যমুনা খাতুনের বান্ধবী সাহারা খাতুন বলেন, যমুনা আমাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল। তাকে সবাই খুব ভালবাসতো। তার এই অকালে চলে যাওয়ায় আমাদের ক্লাসের সবাই শোকার্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে যমুনার মরদেহ এলাকায় এসে পৌঁছালে প্রতিবেশীদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দিনগত রাত ১১টার দিকে হিজলবাড়িয়া গ্রামের কেন্দ্রীয় গোরস্থানে যমুনাকে দাফন করা হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available