সিলেট প্রতিনিধি: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষ ভোট দিতে পারে না, দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। তাই মানুষ শেখ হাসিনাকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতা দেখতে চায় না। আমরা ক্ষমতায় আসর জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা আন্দোলন করছি গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকারের জন্য। তাই পরিষ্কার কথা, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, দেশের মানুষ হতে দেবে না।
২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় সিলেট নগরীর সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষে একদফা দাবিতে ভৈরব থেকে সিলেট অভিমুখে শুরু হওয়ার তারুণ্যের রোড মার্চের সর্বশেষ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষ ভোট দিতে পারে না, দিনের ভোট রাতে হয়, অর্থ পাচার হয়, বিশ্ববাসী তাদের পক্ষে নেই। গোটা বিশ্ব অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি যা শেখ হাসিনা বুঝতে পারছে না। এখন শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে, আর তা হচ্ছে হরতাল। আমরা আওয়ামি লীগের মতো লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ মারি নাই, লাশের উপর নৃত্য করিনাই। আমরা ৭১ সালে শহিদ জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, সাম্য ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। এখন গণতন্ত্রের জন্য, বাক স্বাধীনতার জন্য এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। তারা সাংবাদিক সাগর ও রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার করে নাই। আওয়ামী লীগ লক্ষ লক্ষ কেটি টাকা বিদেশে পাচার করে ব্যাংক গুলিকে খালি করে দিয়েছে। ডলারের কারণে এলসি করা যাচ্ছে না। ভোট চোরকে মানুষ বিশ্বাস করে না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামি লীগ ছাড়া কেউ ভোট চুরি করে না।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সূচিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে আমির খছরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এক দফা এক দাবিতে এই রোডমার্চ, তা হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ। এই সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, এই দাবিতে মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছে। দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে বিদায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। দেশের মানুষের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে কোন পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। কারণ তারা জানে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন পরিবেশ নাই। বিশ্ববাসী একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায়। তাই সরকারের ভোট চুরি করার প্রকল্প ভেঙ্গে দিতে হবে, তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ভোট চোর ও তাদের সহযোগী সকলের তালিকা করতে হবে। তাই সরকারকে বিদায় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পরে এটি সবচেয়ে বড় মুক্তির সংগ্রাম। এ জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ.জেড.এম. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী ও ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল ও খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন ও এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী ও হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী।
রোডমার্চকে বরণ করতে বিকেল ৩টা থেকেই আলিয়ার মাঠে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকেল ৪টার পূর্বেই মুহুর্মুহু বৃষ্টি উপেক্ষা করে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দীর্ঘসময় অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে মঞ্চ থেকে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন জাসাসের শিল্পীবৃন্দ।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস.এম জিলানী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, মামুনুর রসিদ মামুন, মিফতাহ সিদ্দিকী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, নজিবুর রহমান নজিব, হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, শামীম আহমদ, সৈয়দ সাফেক মাহবুব, মকসুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন, শাহনেওয়াজ বক্ত তারেক, মির্জা সম্রাট হোসেন, মাহবুবুল হক চৌধুরী, শাকিল মোর্শেদ, আফসর খান, তাহসিন শারমিন তামান্না, নিগার সুলতানা ডেইজী, নিজাম উদ্দিন তরফদার, সুরমান আলী, জাহাঙ্গির হোসেন জীবন, সুদীপ জ্যোতি এষ, দেলোয়ার হোসেন দিনার, ফজলে রাব্বি আহসান প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার সকালে ভৈরর শুরু হওয়া রোডমার্চ রাত পৌনে ৮টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এসে পৌঁছে। এ সময় সমবেত জনতা মুহুর্মুহু কড়তালি ও স্লোগান দিয়ে রোডমার্চের গাড়ি বহরকে স্বাগত জানায়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available