নিজস্ব প্রতিবেদক: চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে এমন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় মেইনস্ট্রিমিং এবং সবার জন্য চোখের যত্নের সুযোগ সৃষ্টি করা এ নেটওয়ার্কের লক্ষ্য।
২৬ অক্টোবর শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত চোখের স্বাস্থ্যে জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং বিষয়ক এক পরামর্শ-কর্মশালায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
নেটওয়ার্কের প্রথম সভা হিসেবে ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন অপথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওএসবি) সভাপতি এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রিভেনশন অব ব্লাইন্ডনেস (আইএপিবি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি চেয়ার অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন।
অধ্যাপক এনায়েত বলেন, চিকিৎসা শিক্ষায় এবং চক্ষুবিদ্যায় উচ্চতর অধ্যয়নে নারীদের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি, কিন্তু তারপরও নারীরা চক্ষু সেবা গ্রহণে পুরুষদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ এবং দৃষ্টি ত্রুটি সংশোধনে চশমা পরার ক্ষেত্রে সামাজিক বাধাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চক্ষুসেবা খাতের অংশীজনদের স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি মাল্টি-সেক্টর অ্যাকশন প্ল্যান দরকার যার অধীনে আমরা পুরো সমাজের জন্য একসাথে কাজ করবো।’
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ বলেন, জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিংয়ের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তবে এখন উপযুক্ত সময় এটিকে অগ্রাধিকারে রেখে এগিয়ে যাওয়ার এবং পরিমাপযোগ্য সুপরিকল্পিত অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনাগুলিকে কার্যকর করার।
তিনি ঘোষণা দেন যে, ডেন্ডার সমতা এবং জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং এজেন্ডার জন্য কাজ করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সব সময় থাকবে অরবিস।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের সাবেক পরিচালক ডা. খালেদা ইসলাম বলেন, সার্বজনীন চক্ষু স্বাস্থ্য কভারেজ বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তি ও সমতার জন্য একটি ‘বহু-খাত’ ও ‘গোটা-সমাজ’ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী আরও বেশি নারীকে চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আনতে জেলা পর্যায়ে দক্ষ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ পাঠানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘মহিলা চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা আগামী ১০ বছরে পুরুষদের চেয়ে বেশি হবে। কিন্তু আমরা এ থেকে উপকৃত হবো না যতক্ষণ না আমরা এসব চিকিৎসককে ঢাকার বাইরে পাঠাতে পারি।’
সমতা ও মানবাধিকার কর্মী শীপা হাফিজা, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ এবং ফেইথ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক নিলুফার করিম, সেভ দ্য চিলড্রেনের জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশন উপদেষ্টা শাহানুর আক্তার চৌধুরী, ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক (কমিউনিটি সার্ভিস) গাজী নজরুল ইসলাম ফয়সাল, হেলেন কেলারের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান ডা. আফসানা হাবিব শিউলী, রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. ফারহানা হক, ব্র্যাকের প্রোগ্রাম হেড মাসুম বিল্লাহ, ডেভরেসোন্যান্সের প্রধান নির্বাহী নাজমে সাবিনা, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার (জিএসি) প্রো-নার্স প্রকল্পের টিম লিডার ডা. সেলিনা আমিন, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি) সহকারী পরিচালক আনিকা রহমান লিপি, ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিহান আবেদিন, সাইটসেভার্সের প্রোগ্রাম ম্যানেজার বিএম জাহিদুল ইসলাম, ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রাহমানু অঞ্জলা, বিএনএসবি মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুশাহিদ আহমেদ এবং ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. নুরুল আলম সিদ্দিকী আলোচনায় অংশ নেন।
বক্তারা জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং এবং চক্ষুস্বাস্থ্যে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দেন। পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আরও গভীর জেন্ডার বিশ্লেষণ প্রবর্তন, জেন্ডার বিষয়ে পরিসেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নেতিবাচক সামাজিক রীতি পরিবর্তনের জন্য কমিউনিটি-স্তরে জেন্ডার বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করা, নারী ও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য আলাদা ক্যাম্প পরিচালনা, চক্ষুসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক বাধা দূর করা, পরিকল্পনা প্রণয়নে তরুণীদের সম্পৃক্ত করা এবং প্রাক-বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি পরীক্ষা নিশ্চিত করা।
কর্মশালায় অরবিসের সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ম্যানেজার মির্জা মানবিরা সুলতানা অরবিসের পার্টনার হাসপাতালগুলোতে পরিচালিত একটি গবেষণার ভিত্তিতে প্রণীত ‘বাংলাদেশ জেন্ডার-ভিত্তিক বিশ্লেষণের ফলাফল’ উপস্থাপন করেন।
বিশ্লেষণে তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক চক্ষুসেবার চারটি বাধা চিহ্নিত করেন। এগুলো হলো কাঠামোগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নীতিগত বাধা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available