মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর শরীরে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত পুশ করার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে কয়েক ঘণ্টা পর রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তারা কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
নিহত ব্যক্তির নাম মো. বিল্লাল (৫৫)। তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘি খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে গত ১৬ এপ্রিল বুধবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ১৮ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয় তার শরীরে। রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
রোগীর পরিবার দাবি করেছে, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকেই ভুল রক্ত সরবরাহ করা হয়। তারা বলেন, “আমরা রক্ত এনে নার্সদের দিই। তখন নার্সরা ডাক্তারি অর্ডার চায়। ডাক্তার রক্ত দেখে অর্ডার দেন, তারপর সেটি পুশ করা হয়। এরপর থেকেই রোগীর শরীর ঠান্ডা হতে থাকে। বাইরের একজন বলার পর আমরা বুঝি ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে।”
স্বজনদের অভিযোগ, ভুল বুঝতে পারার পর তারা বারবার ডাকাডাকি করলেও নার্স বা ডাক্তার কেউই এগিয়ে আসেননি। বরং তারা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। রাত ৮টার দিকে এক চিকিৎসক এসে রোগীকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু স্বজনরা তা সম্ভব নয় বলে জানান।
এ ঘটনায় হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ভুল করে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই না করেই রক্ত দেওয়া হয়েছে, এটি অবশ্যই মারাত্মক ভুল।
তবে মৃত্যুর সনদে এ ভুলের কোনো উল্লেখ নেই। এতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে শুধুমাত্র 'শ্বাসকষ্ট' উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. ইশতিয়াক বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই এমনটি করা হয়েছে।”
ঘটনার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নূরজাহান ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, মৃত্যুর পরপরই হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর স্বজনরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করেন।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রোগীর স্বজনরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available