প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম আজাদ: বাঙ্গালী জাতি দেশ স্বাধীন হবার পূর্বে ও পরে বারবার যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তেমনি হোঁচটও খেয়েছে। জাতি দেখেছে, এদেশের নেতাদের হিরো থেকে অপমানজনক প্রস্থান, আবার সেই জাতি এখনও বুকে ধারন করে রেখেছে একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। কারণ জিয়াউর রহমান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে শুরু করেছিলেন উৎপাদনের রাজনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্র। জিয়াউর রহমান জানতেন রাজনীতিবিদদের প্রধান কাজ হলো জনগণের সেবা করা। সাধারণ মানুষের সুখে-দু:খে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো। জিয়াউর রহমান সব ধরনের রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল ডিঙ্গিয়ে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে চলে যেতেন সমাজের একেবারে অনগ্রসর মানুষদের চাওয়া-পাওয়া, না পাওয়ার বেদনায় ব্যথিত মনের অনুভূতিগুলো জানা ও বুঝার জন্যে। অতপর তাদের কল্যাণে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন বলেই এদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান এক অবিস্মরণীয় ও অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হতে সক্ষম হন। পিতার ন্যায় তারেক রহমান দেশের আঠার কোটি মানুষের নয়নে আগামীর দেশনায়ক হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন। আসুন জেনে নেই কি কারণে তিনি দেশনায়ক?
বাস্তববাদী পোড় খাওয়া মানুষ
তারেক রহমানের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর জিয়া তখন মুক্তিযুদ্ধে। তখন তিনি দেখেছেন কি ভয়ানক অনিশ্চয়তা ও গভীর উৎকন্ঠার মধ্যে তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়া দিন কাটিেেছন। তাঁর বয়স যখন মাত্র দশ, তখন তাঁর বাবা জিয়াউর রহমান কিভাবে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের পর ক্ষমতার শূন্যস্থান পূরণ করেছেন। তিনি যখন ষোল বছরের সদ্য কিশোর, তিনি তাঁর মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে কফিনে মোড়ানো তার পিতার ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে আঁতকে উঠেছেন। তিনি দেখেছেন কীভাবে তার মা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, দল গঠন করেছেন এবং ক্ষমতায় গিয়েছেন। তিনি ক্ষমতা থেকে বিরোধী থাকার স্বাদও দেখেছেন এমনকি ১/১১ এর ভয়ানক নির্যাতন, জেল খাটা, দেশত্যাগ এবং সুদীর্ঘ সতের বছর যাবত প্রবাসে থেকে দলকে চালানোর ম্যাজিকও দেখিয়েছেন। তিনি দেখেছেন ছোট ভাইযের মৃত্যু এবং বিনা চিকিৎসায় মমতাময়ী মায়ের মৃত্যু পথযাত্রা।
সাংগঠনিক পদ গ্রহনে গণতন্ত্রায়ন
বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যখন মাঠে-ময়দানে সভা-সমাবেশে ব্যস্ত বা গ্রেফতার আতঙ্কে থাকতেন, তখন তারেক রহমান দলের নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক হঠাও আন্দোলনের মিছিলে সরাসরি উপস্থিত থেকে ছাত্রদলকে পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেন। ১৯৯৩ সালের জুন মাসের সম্মেলনে তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির সদস্য হন। ২০০২ সালের ২২ জুন তারিখে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে দলের এক নম্বর যুগ্ম-মহাসচিব পদে নিয়োগ দেন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির কাউন্সিলাররা তাঁকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন। ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সালে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
উত্তম মানবিক চরিত্রের অধিকারী
তারেক রহমানের মূলত ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, অসহায়দের সহায়তা এবং আন্দোলন-সংগ্রামে আহত বা পঙ্গু দলের নেতা-কর্মীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে আসছেন। তারেক রহমান ২০১১ সাল হতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার লাঠিগঞ্জের তিন মাথার মোড়ে এতিমদের জন্য একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছেন, যেখানে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষার্থী দৃষ্টিহীন। বগুড়ার এ এতিমখানার মতো সারাদেশে আরও ৫টি এতিমখানার দায়িত্ব নিয়েছেন তারেক রহমান। বিএনপির পাশাপাশি 'জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন' এবং 'আমরা বিএনপি পরিবার' সমাজের এতিম, বৃদ্ধ ও স্বামী পরিত্যাক্ত হাজার হাজার অসহায় পরিবারের পাশে কাজ করছে। তাছাড়া তিনি দলীয় ১২ জন কর্মীর কৃত্রিম হাত-পা সংযোজনের ব্যবস্থা করেন। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন বা গুম হয়েছেন, এ রকম প্রায় ১৪৪ টি পরিবারকে প্রতিমাসে ভাতা দিচ্ছেন। এ ছাড়া গুম, খুন হওয়া ব্যক্তিদেও পরিবারগুলোর মধ্যে তিনজনের বিয়ের আয়োজন করেন তারেক রহমান নিজ উদ্যোগে। তারেক রহমান অসহায় ও অস্বচ্ছল প্রায় দেড়-শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেন। তাদেও অনেকেই এখন চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং সরকারী সংস্থায় উচ্চ পদে চাকুরী করছেন। তিনি অনেক দুস্থ পরিবারকে থাকার জন্য ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এবং পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত প্রায় ১৫০ জনকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। সম্প্রতি স্মরণকালের ভযাবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশেও দাঁড়ান তিনি।
প্রশিক্ষিত উন্নয়ন কর্মী তৈরির কারিগর
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মতো রাজনীতিকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি ২০০৫ সালের ৪ জানুয়ারী সারাদেশে ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু করেছিলেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৩টি জেলায় লক্ষাধিক ইউনিয়ন প্রতিনিধি তিন মাস ধরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাদের মনের কথা বলেছেন অকপটে এবং দলকে দিয়েছেন ন্যায্য মতামত ও পরামর্শ। তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে তরুণ নেতৃত্ব তুলে এনে রাজনীতি এলিট শ্রেনীর আধিপত্য ভেঙ্গে দিতে ঔ কাজটি নিয়েছিলেন। তারেক রহমানের রাজনীতির সবচেয়ে বড় গুণ হলো 'হি ইজ ওপেন টু নিউ আইডিয়াজ'।
একজন স্বপ্নদ্রষ্ঠা নেতা
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে বিএনপির রুপরেখার ৩১ দফা একটি দলিল যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাতির সামনে তুলে ধরেন নিজস্ব মতামত। এই ভিশনারী রুপকল্পে উল্লেখ আছে যাতে আগামীর বাংলাদেশে আর কোন ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার লাইসেন্স না পাওয়ার নিশ্চিয়তা। জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা, বহুত্ববাদ ও অসাম্প্রদায়িক বালাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি। তিনি সব সময় বলে থাকেন 'বাঙালি-অবাঙালি, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রত্যেক নাগরিকের একমাত্র পরিচয় - আমরা বাংলাদেশী' যা নাগরিক জাতীয়তাবাদ সমর্থন করে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা
২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের নিশিরাতের নির্বাচন এবং সর্বশেষ আমি-ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে পতীত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার দেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছিল। তারেক রহমান সেই সুদুরের ৮০০০ মাইল দূর থেকে দিন-রাত পরিশ্রম করে বিএনপি, সব অঙ্গসংগঠন, সকল নেতা-কর্মী যে যেখানে ছিল, সকলকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করে বিগত সময়ে গণতন্ত্র ফিড়িয়ে আনতে রাজপথে মরণপণ লড়াই করেছে। তাঁর ডাকে ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিটি সভা-মহাসমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতি প্রমান করে তিনিই বিএনপির হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মাঠে থাকা বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃত্ব হাসিনা সরকারের পতনের পটভূমি তৈরি করেছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান শেষ বাঁশি বাজিয়েছেন। বিগত আন্দোলনে তাঁর স্লোগান 'নেতৃত্ব নিন, নেতৃত্ব দিন' ছিল মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনের মূলমন্ত্র।
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট লিডার
২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্ট জুড়ে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম থেকেই তাদের ভ‚মিকা সমর্থন করেছেন ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকার জন্য ভিডিও মেসেজ দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। বিএনপি ও এর সকল ইউনিটকে সার্বক্ষণিক আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার নির্দেশ দেন। যেমন, ১৮ জুলাই কোটার যৌক্তিক সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে 'কমপ্লিট শাটডাউন'-এর ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা। সেই আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে। সেই সময়ে তিনি বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে তাদেরকে পরামর্শ, দিক-নির্দেশনা ও একটির পর একটি বার্তা দিয়ে সংঘবদ্ধ করেছেন। এই আন্দোলনে ছাত্রদল ও বিএনপির মিডিয়া সেলের ভ‚মিকা অপরিসীম। ঐ আন্দোলনে ১৫৮১ জনের মৃত্যু, ১৯ হাজার আহত, ৬৪৭ জনের চোখ নস্টের বিনিময়ে জাতি সিন্দাবাদের বুড়ি মুক্ত হয়েছে। ৫ আগষ্টের পর থেকে দলে বিশৃঙ্খলা রোধে স্মার্ট অ্যাকশনে আছেন তারেক রহমান। যার ফলে আওয়ামী বয়ান 'ক্ষমতা হারালে এক দিনে ১০ লাখ নেতাকর্মী মারা যাবে' ধূপে টিকে নাই। তিনি শক্ত হাতে দলের বিশৃঙ্খলা রোধ করেছেন এবং প্রতিনিয়ত বক্তব্যে নতুনত্ব ও একর পর এক বাস্তবধর্মী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অন্তবর্তী সরকারের জন্য সহায়ক বলে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন।
রাষ্ট্র বির্নিমানে কালজয়ী উক্তি
একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা, এনে দিবে স্বচ্ছলতা। প্রতিশোধ নয়, এগিয়ে যেতে হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথে। আমাদের গড়ে তোলতে হবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, এই অগ্রযাত্রার গতি হবে দ্রুত, লক্ষ্য হবে সুনির্দিষ্ট। প্রতিহিংসা নয় বরং সহযোগিতা, বিভক্তি নয় বরং ঐক্য ও সংহতি এখনই সময়ের দাবি। যদি ভয় পান তাহলে আপনি শেষ, যদি রুখে দাঁড়ান তবে আপনিই বাংলাদেশ। I want to build a Bangladesh where there will be no need for such platforms or individuals to assist the needy because no one will be helpless or impoverished. Take Back Bangladesh.
লেখক: গবেষক ও অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available