আফরুজা আভা: বহুল আলোচিত সনাতন ধর্ম গুরু ও ইসকন মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত ২৫ নভেম্বর রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সনাতনী জাগরণ জোটের এক সমাবেশ আয়োজিত হয়। উক্ত সমাবেশে জুলাই-আগস্টে চলা ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের সময় উত্তোলিত জাতীয় পতাকার ওপর ইসকনের গেরুয়া পতাকা স্থাপন করা হলে ৩১ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে প্রধান আসামী করে আরও ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেন সাবেক বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। ওই মামলার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে।
কিন্তু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ছাড়াও ধর্মীয় কট্টরতা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই সনাতন ধর্মের এই ধর্ম গুরু গ্রেফতারের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিক্ষোভ নিয়ে মিশ্র সমালোচনা হচ্ছে দেশজুড়ে। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হলে ইসকন এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদের সমালোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
সনাতন ধর্মীয় দর্শনের কৃষ্ণভাবনামৃতের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত হলেও ইসকনের বিরুদ্ধে বারংবার বিভিন্নভাবে কট্টর হিন্দুত্ববাদ এবং সম্প্রদায়িক উগ্রতার উস্কানিসহ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ উঠেছে। ইসকন এবং বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বিভিন্ন সময় ধর্মীয় উগ্রতাকে উস্কানি দিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের উস্কানিমূলক সভা সমাবেশ আয়োজন এবং বক্তব্য দেয়ার বিষয়েও রয়েছে কঠোর সমালোচনা।
হিন্দু ধর্ম মতে, রাধারানীর পিতা পুন্ডরিক বিদ্যানিধি জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার মেখলা গ্রামে। পুন্ডরিক বিদ্যানিধির জন্মভূমির এ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সনাতন ধর্মের এক মন্দির। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংগঠন ইসকনের নাম অনুযায়ী পুন্ডরিক ধামের এ মন্দির ‘ইসকন মন্দির’ হিসেবেই পরিচিত। মূলত কট্টর হিন্দুত্ববাদ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসে কাজ করে যাওয়া সংগঠন ইসকন দাঁড়াই মন্দিরটি পরিচালিত হয়।
আলোচিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস উক্ত ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পূর্বে ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আসল নাম চন্দন কুমার ধর। চট্টগ্রামে তিনি হিন্দু ধর্ম গুরু হিসেবে বেশ পরিচিত হওয়ায় বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় চিনময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার গ্রেফতারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতারকে ঘিরে ভারতের এমন বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available