মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) পরিবহন ব্যবস্থা দিন দিন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই বাস, ঝুলে ঝুলে যাতায়াত এবং সীমিত সংখ্যক বাসের কারণে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
ক্যাম্পাস থেকে শহরে টিউশনি করাতে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেই শহরমুখী হয়ে থাকেন। শহরে যাতায়াতে যে অর্থ ব্যয় হয়, তা দিয়ে তারা হলে একদিনের খাবার কিনতে পারেন। ফলে ক্যাম্পাসের পরিবহন সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের মতোই মৌলিক চাহিদায় পরিণত হয়েছে।
সংগত কারণে শহরে একেকজন একেক পয়েন্টে নামেন। এতে কারে যাত্রী বোঝাই বাস থেকে নামার সময় রীতিমতো যুদ্ধ করে নামতে হয়, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নামতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
শুধুমাত্র সকাল ৮টা ও বিকাল ৫টার ট্রিপ শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও, সরেজমিনে দেখা যায়, কর্মচারীরা সবগুলো ট্রিপেই যাতায়াত করছেন। এতে করে যাত্রীর চাপ আরও বেড়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী ও ড্রাইভার উভয়ই চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সময়কালে বাজেট সংকটের কথা বলে বাস ট্রিপ সীমিত করা হয়।
ঐসময়ে শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যান। গণঅভ্যুত্থানের পর ড. মো. ফরহাদ হোসেনের পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার। শিক্ষার্থীরা প্রতি সেমিস্টারে পরিবহন অফিসকে যে টাকা দেয় সে টাকা আলাদাভাবে পরিবহন অফিসে জমা না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হয়। এ বিষয় নিয়েও শিক্ষার্থীরা ঐসময় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বাস ট্রিপ বাড়ানো হলেও যাতায়াতে ভোগান্তি যেন লেগেই আছে। কোনো স্থায়ী সমাধানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলাবলি করছেন, ভার্সিটিতে সিট পাওয়ার চেয়ে বাসে সিট পাওয়া বেশি সংগ্রামের।
বয়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেকেই নিজেদের খরচ নিজে জোগাড় করার জন্য টিউশনি করাই। এই টিউশনি করতে যেয়ে যদি আমাদের প্রতিদিন ৭০-৮০ টাকা খরচ হয়ে যায় তাহলে মাস শেষে মোটা অংকের একটা টাকা আমাদের পকেটে থাকে না। এই টাকা আমাদের জন্য অনেক বড় অংক। কারণ, আমরা নিজেরাই আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সার্ভিস আমাদের জন্য খাবারের মতোই জরুরি। কিন্তু বাসে জায়গা না পাওয়া এবং ভাড়ার অতিরিক্ত চাপে আমাদের পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে বাধা পড়ছে। আমরা পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই। যদি প্রয়োজন হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য খরচ কমিয়ে এই পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি করা হোক। কারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ।
দুপুরের ট্রিপে সরেজমিনে বাস চালক মো. শাহেদ আলীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বাসে ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করছেন। এতে বাসে স্থানের অভাব দেখা দিচ্ছে এবং অনেক শিক্ষার্থীকেই বাসে উঠতে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের এই অতিরিক্ত চাপে চালকরাও বিপাকে পড়ছেন। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ভুল বুঝে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। এভাবে যাত্রী বুঝায় বাস চলাচল করলে যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
পরিবহন পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল বাশার জানান, আগামী সপ্তাহে আমরা একটি নোটিফিকেশন জারি করব যেখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ছাত্রদের নির্ধারিত বাসে যাতায়াত না করার জন্য অনুরোধ করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যার বিষয়ে আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা ইতোমধ্যে নতুন ট্রিপ যুক্ত করেছি। তবে আমাদের সামনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের মোট গাড়ির সংখ্যা ২৭টি হলেও ড্রাইভারের সংখ্যা মাত্র ১৯ জন। এই সীমিত সম্পদের মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের। আমরা বুঝতে পারি যে এখনও সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সমাধান হয়নি। পরিবহন অফিসের বর্তমান সম্পদ দিয়ে আরও বেশি কিছু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available