সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিনিধি: রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া অভিজিৎ হালদার (১৮) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসা ও অনিয়মের অভিযোগে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাস।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীর ভুল চিকিৎসা ও অভিযোগে মৃত্যুর ঘটনায় মানববন্ধন করে। মানববন্ধনকারীদের অভিযোগ, সে সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের ড্রেস পরিহিত কিছু শিক্ষার্থী মানববন্ধনকারীদের উপর হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের প্রায় ৩০ জন আহত হয়।
২৪ নভেম্বর রোববার এই ঘটনার জেরে ডা. মাহবুবর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেলের প্রধান ফটক আটকে ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে তারা সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রবেশ করে ভাঙচুর করে।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের ভাঙচুর করতে করতে তারা পুরাতন ভবনের ভেতরেও ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় উঠে কয়েকটি বিভাগ ভাঙচুর করে। এ সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রাণিবিদ্যা, বাংলা ও ইংরেজি বিভাগ। এছাড়াও বাকি প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে ও ল্যাবে তাণ্ডব চালানো হয়। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ডকুমেন্টস।
এদিকে এ ঘটনার পরে সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয় তবে পরবর্তীতে হামলা ও ভাঙচুরের কারণে পরীক্ষা নেওয়ার পরিবেশ না থাকায় বাধ্য হয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় পরীক্ষা বাতিল করেন।
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রেজাউল হক বলেন, গত ১৬ নভেম্বর সকালে অভিজিৎ হালদার নামে এক শিক্ষার্থীকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। পরে তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় তার অবস্থার অবনতি হলে রোগীর অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সব চিকিৎসা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও ১৮ তারিখ মারা যায় অভিজিৎ। কিন্তু এখানে আমাদের কোনো ত্রুটি কিংবা অবহেলা ছিল না। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যু পরবর্তী মরদেহ হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রোগীর আত্মীয়কে বুঝিয়ে দেন এবং রোগীর সম্পূর্ণ বিল স্থগিত রাখা হয়।
ডা. রেজাউল হক আরও বলেন, এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি মহল কোমলমতি ছাত্রদের ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য ও উসকানিমূলক তথ্য দিচ্ছে এবং হাসপাতালের পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। যা শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে এবং অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে নষ্ট করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দেখা যায় প্রতিটা বিল্ডিং, ডিপার্টমেন্ট ও অফিস কক্ষে চালানো হয়েছে তাণ্ডব। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস। আহত হয় সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্যরাসহ প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স আনলে সেটাও তারা ভেঙে চুরমার করে ফেলে।
শিক্ষার্থীরা জানান, হঠাৎ মাহবুবর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজের গেইট ভেঙে ঢুকে পরে এবং তাণ্ডব চালায়। সামনে যা পেয়েছে সবকিছু ভেঙেছে। ক্যাম্পাসের কিছুই রাখেনি। সাথে তারা যা পেয়েছে লুট করছ। পরিদর্শনে আরও দেখতে পাওয়া যায় পার্কিং এ থাকা সোহরাওয়ার্দী কলজের সকল গাড়ি ভাঙছে।
এই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আরও জানান, তারা প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাননি। আটকে রাখা হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের। বার বার কল দেওয়ার পরও সেনাবাহিনী, পুলিশ কেউই ঘটনাস্থলে আসেনি। পুরো তিন ঘণ্টার অধিক সময় ধরে চলে এই তাণ্ডব এতে সোহরাওয়ার্দী কলেজে প্রায় ২০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চেয়েছে শিক্ষার্থীরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available