বাকৃবি প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মধ্য দিয়ে তৈরি করা হবে চার লেনের রাস্তা। রাস্তাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হয়ে আব্দুল জব্বারের মোড় দিয়ে শেষ মোড়ের দিকে যাবে। এই রাস্তাই যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একান্ত প্রয়োজন। রাস্তাটি করতে তাই বৃক্ষ নিধনে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রশাসন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে এ যেন রাক্ষসের মতো গাছ গিলছে বাকৃবি প্রশাসন! নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। ১২০০ একরের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পতিত জায়গা রয়েছে, কিন্তু গাছ কেটে উন্নয়ন কেনো? প্রশাসনিক ব্যর্থতাই এখানে প্রধান মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বৃক্ষ নিধনের কাজ। প্রথমে শুরু হয় রাস্তার চারপাশে থাকা বড় বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটার মাধ্যমে। বিভিন্ন সংগঠন এসময় প্রতিবাদ ও মানববন্ধনও করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা সেই গাছ কাটা তো বন্ধ হয়নিই, নতুন করে আরও ৬০টি কাজ কেটে ফেলা হচ্ছে। চার লেনের রাস্তা করায় আব্দুল জব্বার মোড়ে অবস্থিত দোকানগুলো সরাতেই গাছ কেটে জায়গা করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছে বিশাববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনাও শুরু হয়। সম্প্রতি পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েস গাছ কাটা বন্ধ করে দেয় এবং তাদের সাথে প্রশাসনের একটি আলোচনা সভাও হয়। কিন্তু তবুও চলছে বৃক্ষ নিধনের কাজ। ভবন নির্মাণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক আমবাগানও আজ প্রায় মৃত।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে আব্দুল জব্বারের কাছে গাছ কাটার স্থানেই বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন। এসময় তারা গাছ কাটা পড়লো কেনো, প্রশাসন জবাব চাই, নির্মাণের দোহাই দিয়ে গাছ কাটা চলবে না, অবিলম্বে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করুন, ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করুনসহ নানান স্লোগান দিতে থাকে।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, ভবন নির্মাণের নামে গাছ কেটে ফেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক আমবাগান আজ প্রায় মৃত। ভবন নির্মাণের কারণে আমগাছের গোড়ায় ফেলা হয়েছে অনুর্বর বালিও। দেড় শতাধিক গাছের মধ্যে প্রায় ৩০টি গাছ ছাঁটাইয়ের ফলে সেগুলো এখন মৃত প্রায়। এখন ক্যাম্পাসের প্লাটফর্মের পাশের জায়গা এবং আব্দুল জব্বার মোড়ের কাছে জিমনেশিয়ামের সামনে জায়গাগুলোও গাছগাছালিতে পূর্ণ জায়গা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে দোকানপাট স্থানান্তরের নামে কাটা হচ্ছে বড় কড়ই গাছ। তারা দুই জায়গায় প্রায় ৬০টি গাছ কাটবেন। এছাড়াও সব মিলিয়ে শতাধিক গাছ কেটেছে গত তিন মাসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন পরিষ্কার করে গাছ লাগানো কথাও বলেনি, শুধু বলছে অনেক বেশি গাছ লাগানো হবে। যা কোনো দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে আরও জানা যায়, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগে চার লেনের রাস্তা নির্মাণ এবং ভবন সংস্কারের নামে কাটা হয়েছে শতাধিক বৃক্ষ। প্রথম গেট থেকে আব্দুল জব্বারের মোড় পর্যন্ত রাস্তার জন্য কাটা হয় ৫০টিরও বেশি বৃক্ষ। বিভিন্ন অনুষদের সামনের কৃষ্ণচূড়া, রেইনট্রি, দেবদারু, গন্ধরাজ, মে ফ্লাওয়ারসহ বহু প্রজাতির গাছ নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের সামনে এবং আব্দুল জব্বার মোড় সংলগ্ন মাঠ ফাঁকা রয়েছে। কিন্তু বড় বড় গাছ কেটেই কেনো করতে হবে দোকান বসানোর জায়গা? আর বিশ্ববিদ্যালয় কী বাণিজ্য কেন্দ্র?
শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কাওছার আহম্মেদ মিজান বলেন, পরিবেশের এই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে নষ্ট করছে।
আরেক শিক্ষার্থী মো. রাশেদ হোসাইন বলেন, এই বৃক্ষরাজি আমাদের ক্যাম্পাসের প্রাণশক্তি, যা ধ্বংস করা হচ্ছে।
গাছ কাটার প্রতিবাদে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গত ৫ ডিসেম্বর লিখিতভাবে অনুরোধ করে বাকৃবি গ্রিন ভয়েস শাখার সদস্যরা। কিন্তু এতে সাড়া না পেয়ে ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে গাছ কাটার স্থানে ৭-৮ জন সদস্য হাজির হয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দেন। পরে ঘটনা স্থান থেকে শ্রমিকরা গাছ কাটা অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরে যান। কিন্তু পড়ে আবারও গাছ কাটা শুরু হয়।
এ বিষয়ে গ্রিন ভয়েসের সভাপতি মো. বকুল আলী বলেন, বৃক্ষনিধনের বিরুদ্ধে আমরা পূর্বে মানববন্ধন করেছি, সাম্প্রতিক সময়ে লিখিত ও সরজমিনে প্রতিবাদ করেছি তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্ণপাত করল না যা খুবই দুঃখজনক। এমনকি আমরা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছি-বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রকৌশলী স্থপতি ইকবাল হাবিব স্যারকে নিয়ে এসে গাছের নিচে দোকানের প্ল্যান করে দিচ্ছি আপনারা বৃক্ষনিধন বন্ধ করুন। কিন্তু প্রশাসন বলেছে- এটার প্ল্যান হয়ে গেছে ও গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন তাই এটা এখন বন্ধ করা সম্ভব না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আচরণে আমরা খুবই হতাশ হয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমি আগামীকাল (১৩ ডিসেম্বর) ঘটনাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করবো। সেখানে সবার সাথে কথা বলে দোকানগুলো কোথায় স্থানান্তর করলে ভালো হবে তা আলোচনা করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available