• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে পৌষ ১৪৩১ সন্ধ্যা ০৬:০৬:২৮ (11-Jan-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৮শে পৌষ ১৪৩১ সন্ধ্যা ০৬:০৬:২৮ (11-Jan-2025)
  • - ৩৩° সে:

ক্যাম্পাস

নোবিপ্রবি: বিজ্ঞানের ক্যাম্পাসে ব্যর্থতার পাঁচ গল্প

১১ জানুয়ারী ২০২৫ দুপুর ০২:৫৩:৪৬

নোবিপ্রবি: বিজ্ঞানের ক্যাম্পাসে ব্যর্থতার পাঁচ গল্প

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন ২০০১ সালে পাশ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নাম শুনলেই বিজ্ঞানের কথা মনে হয়, কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু আছে যেটা শুনলে চমকে যাবেন! মেডিকেল সেন্টার থেকে শুরু করে ক্রিকেট পিচ, বিজিই উদ্যান, ভূতের বাড়ি, এমনকি হাঁস-মুরগির ছাত্রলীগ অফিস পর্যন্ত। চলুন জেনে নেই নোবিপ্রবির পাঁচ আশ্চর্য।

১. ভূতের বাড়ি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক ভবন-৩-কে আদর করে ‘ভূতের বাড়ি’ নামে ডেকে থাকেন। কারণ, ১০ তলা ভবনের কাজ শুরু হওয়ার পর ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র ২ তলার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, এরপর থেকেই কাজ বন্ধ। জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মামলা চলমান থাকায় নির্মাণকাজ আটকে আছে।

এছাড়া, অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ১১৫ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি অর্থ ইউজিসিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ক্লাসরুম সংকট এতটাই প্রকট যে, শিক্ষার্থীদের ক্লাস কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে প্রভোস্টদের জন্য নির্মিত বাসায়। অন্যদিকে, ক্যাম্পাসে চলার পথে অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ দেখলে শিক্ষার্থীরা মজা করে একে ‘ভূতের বাড়ি’ বলে পথ পরিবর্তন করেন। বর্তমানে শতকোটি টাকার নির্মাণাধীন ভবনটি বনে-জঙ্গলে একাকার অবস্থায় পড়ে আছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে জি কে শামীমের সুপারিশে অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ এর কাজ একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করে। ১০ তলা ভবনটির কাজ ৩০ মাসে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ৬ বছর পার হয়ে গেলেও কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।

২. নাপা সেন্টার

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সেবার মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। এখানে গেলে ফ্রি পরামর্শ, একটি প্রেসক্রিপশন, কিছু নাপা এবং গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়া আর কোনো উন্নত সেবা পাওয়া যায় না।

সম্প্রতি এক শিক্ষার্থী জরুরি চিকিৎসা এবং অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে লোকাল গাড়িতে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা গেছেন। এই ঘটনার পর মেডিকেল সেন্টারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মেডিকেল সেন্টারে অপারেশন থিয়েটার এবং প্যাথলজির জন্য আলাদা রুম থাকলেও সেগুলোতে কোনো যন্ত্রপাতি বা অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান নেই। এমনকি অপারেশন থিয়েটারে পাখি ঘুমায় এবং প্যাথলজি রুমে মাছ ধরা হয় বলে শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করেন।

মূলত রোগীদের জন্য এখানে যা রয়েছে তা হলো ফ্রি পরামর্শ এবং গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। এক কথায়, এখানে চিকিৎসা নেওয়া মানে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া। শিক্ষার্থীরা মজা করে বলেন, মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তাররা রোগীদের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন নাপা এবং গ্যাস্ট্রিকের ওষুধে।

এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সেবার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

৩. ২০ লক্ষ টাকার ক্রিকেট পিচ

বিশ্ববিদ্যালয় দফতর থেকে জানা যায়, গত ২ বছর আগে সেন্ট্রাল ফিল্ডের সেন্ট্রাল পিচের কাজ এক ঠিকাদারকে সোপর্দ করা হয়। তবে ঠিকাদার কাজ সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হন এবং ৭৭ হাজার ২৮৮ টাকার বিল জমা দিয়ে কাজ ছেড়ে দেন। পিচের মাত্র ১০℅ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল।

পরবর্তীতে কুমিল্লা থেকে মাটি এনে আরেকজন অভিজ্ঞ ঠিকাদার পিচের কাজ শেষ করেন। তবে এর ব্যয় দাঁড়ায় ২০ লক্ষ ১৮ হাজার ১৬৮ টাকা। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার ৮ মাস পরেও এটি খেলাধুলার উপযোগী হয়নি। পিচটি মাঠের মূল মাটি থেকে অন্তত ৮ ইঞ্চি উঁচুতে নির্মাণ করায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পিচ নির্মাণের ফলে ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল ফিল্ড নষ্ট হয়ে গেছে। খেলার উপযোগী পিচ না থাকায় শিক্ষার্থীরা অস্থায়ীভাবে ঘাসে পিচ বানিয়ে খেলছেন, যা ইনজুরির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য অর্থ ব্যয়ের পরেও পিচটি খেলার জন্য প্রস্তুত না হওয়ায় নোবিপ্রবির শরীরচর্চা বিভাগ এবং প্রশাসনের অদক্ষতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলছেন।

৪. বিজিই উদ্যান

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজিই উদ্যান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রহস্যের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণার জন্য নির্ধারিত এই উদ্যানটিতে গাছের ফাঁকে ফাঁকে কিছু ছোট্ট সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোনো বৈজ্ঞানিক উপকরণ নেই। এ দৃশ্য দেখে শিক্ষার্থীরা একেবারে হতবাক।

কিছু শিক্ষার্থী বলছে, ‘এটি গবেষণা কেন্দ্র নয়, বরং একটি সাধারণ গাছের বাগান।’ আবার কেউ মজা করে বলছে, ‘হয়তো এখানে গাছের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা হয়।’ কেউ কেউ আরও রসিকতা করে বলছে, ‘এখানে হয়তো ভূতের গাছ নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, তাই কাছে যেতে ভয় লাগছে।’

মূলত, বিজিই উদ্যানটি গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ল্যাবরেটরি বা বৈজ্ঞানিক পরিকাঠামো না থাকায় এটি গবেষণার জন্য কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উদ্যানটি শিক্ষার্থীদের জন্য শুধুই রহস্যময় এক স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৫. ছাত্রলীগের অফিস

একসময় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ অফিস ছিল নেতাকর্মীদের আড্ডা এবং রাজনৈতিক আলোচনার প্রাণকেন্দ্র। এখানে বসে মানবতার ডাক দেওয়া হতো, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার থেকে কীভাবে পারসেন্টেজ আদায় করা যায়, তা নিয়ে চলত গভীর আলোচনা। এটি ছিল এককালে নেতাকর্মীদের আড্ডার মরমী জায়গা।

স্বৈরাচারের অন্ধকার সময়েও এই অফিস ছিল আলোতে ভরা। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে, স্বৈরাচার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অফিসটির আলোও নিভে যায়। সম্প্রতি দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার কবলে পড়লে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসেও বহু মানুষ আশ্রয় নেয়। তাদের গবাদিপশু রাখার জন্য ছাত্রলীগ অফিসকেই ব্যবহার করা হয়। এতে একদিকে যেমন মানবতার দাবি মেটানো হলো, অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর ছাত্রলীগ অফিসের একটি ব্যবহার দেখা গেল।

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, অফিসটি এখন আর আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের প্রস্তাব, অফিসটিকে পাবলিক টয়লেট বানিয়ে দেওয়া উচিত। তাদের যুক্তি, এতে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হবে এবং একইসঙ্গে এটি অতীতের স্বৈরাচারী অধ্যায়ের এক নীরব সাক্ষী হয়ে থাকবে।

নোবিপ্রবির এই পাঁচ আশ্চর্য শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন হাস্যরসের খোরাক, তেমনি প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার একটি দৃষ্টান্ত। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান না করা হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও ক্যাম্পাস জীবন আরও বিঘ্নিত হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে এগুলো সমাধান করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত এবং সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ








হাতিরবেড়ে জমি জোরপূর্বক দখল চেষ্টার অভিযোগ
১১ জানুয়ারী ২০২৫ বিকাল ০৪:৫৬:৪৩