হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: নেপাল, ভুটান, ভারত, জিবুতি,নাইজেরিয়া ও সোমালিয়ার শিক্ষার্থীদের পদচারণায় একসময় মুখরিত থাকতো উত্তর জনপদের আশার বাতিঘর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। অথচ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার। সর্বশেষ ২০২৪ সেশনে ১৮ জন ভর্তির আবেদন করলেও আসেনি প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৯৮ জন। তন্মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ৭৭ জন, মেয়ে শিক্ষার্থী ২১ জন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আবাসিক হলের ব্যবস্থা না থাকায় ছেলেরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলে এবং মেয়েরা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে অবস্থান করেন।
প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী ভর্তি হয় না। ভিসা জটিলতা, সেশন জট,দীর্ঘ সময়ের স্নাতক কোর্স, এ দেশের সংস্কৃতির সাথে পার্থক্য, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। অন্য সূত্রে জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের দেশের শিক্ষার্থীদেরকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে অনাগ্রহ সৃষ্টি করে। যে কারণে এবছরও অল্প সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বিদেশি শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা জানান, কম খরচে ডাক্তারি পড়তে তারা বাংলাদেশে আসতে চায়। মেডিকেলে সুযোগ না পেয়ে তারা ডিভিএম সহ অন্যান্য বিষয়ে স্নাতকে ভর্তি হন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ কম থাকায় এখন বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদেশি শিক্ষার্থী বলেন, হাবিপ্রবি তে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেশন জট, অতিরিক্ত আবাসিক ফি (মাসিক ১০০০ টাকা), সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় কমে যাচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।
একাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তৈরি না হওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। তারা বলছেন, শিক্ষার পরিবেশ ও মানের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আগে যে সব দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতেন, সেসব দেশ উচ্চ শিক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের হল-সুপার প্রফেসর ড. মো. মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। হাবিপ্রবিতে এ কার্যক্রম চলমান। একইসাথে তাদেরকে আলাদা আলাদা সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে আগ্রহী করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক স্থানের সাথে, বিশেষ করে মেয়েদেরকে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক অসুবিধা দেখভাল, দিনাজপুর মেডিকেলে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল হলের হল সুপার প্রফেসর ড. মো. আদনান আল বাচ্চু জানান, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং হল প্রশাসনের সমন্বয় দরকার। পাশাপাশি তাদের জন্য স্বতন্ত্র হল তৈরি করাও জরুরি।
হাবিপ্রবি প্রশাসন বিগত সময়ে সর্বোচ্চসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুনাম অর্জন করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশন শাখার দায়িত্ব নিয়মিত পরিবর্তন হলেও নির্দিষ্ট সিটের বিপরীতে অল্প সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভৌগোলিক কারণে নেপালি শিক্ষার্থীরা হাবিপ্রবিতে পড়তে আগ্রহী হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় কমে যাচ্ছে নেপালি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশন শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. মো. হাসানুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থী আনার জন্য বিভিন্ন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। তবে আফ্রিকান নাগরিকদের অপরাধ প্রবণতার জন্য সরকার তাদের যাচাই বাছাই করে এ দেশে আসার অনুমতি দেন। এতে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং ওই অঞ্চল থেকে খুব বেশি শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না।
তিনি আরও জানান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশনে নির্দিষ্ট অফিস এবং জনবল না থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা বিভিন্ন অসুবিধায় পড়েন। বর্তমান শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিকভাবে মোটিভেট করা হচ্ছে যেন তাদের মাধ্যম দিয়ে এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আসে।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, 'বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতা সহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেসব খুঁজে বের করে সমাধান করার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available