তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি: গরম ভাতের ধোঁয়ায় ছোট্ট ডাইনিং স্পেসটা একটু প্রাণ ফিরে পায়। রান্নাঘরে ‘খালা’ ব্যস্ত হাতে তরকারি নেড়েচেড়ে দিচ্ছেন, আর টেবিলের চারপাশে বসে থাকা কয়েকজন বন্ধু খুনসুটিতে মেতে উঠেছে। কেউ গান শুনছেন, কেউবা ফোনে গেম খেলছে, আবার কেউ পরদিনের পরীক্ষার নোট একবার ঝালিয়ে নিচ্ছে। বলছিলাম সরকারি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের মেস জীবনের গল্প।
মেসের ছোট্ট ঘরটাই তাদের এক টুকরো আপন জগৎ, যেখানে বন্ধুত্ব, আনন্দ আর বেঁচে থাকার লড়াই একসঙ্গে মিশে গেছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে আসা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই বনানী, মহাখালী, নতুন বাজার, নাখালপাড়া ও তেজগাঁওয়ের মেস কিংবা ভাড়া বাসায় থাকেন। মেস জীবন যেমন স্বাধীনতা আর আত্মনির্ভরতার এক নতুন অধ্যায়, তেমনি অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রুটিন বাঁধা একঘেয়েমি ও নানাবিধ চ্যালেঞ্জও এর অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিশেষ করে নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য রাজধানীতে বাসা বা মেস খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। উচ্চমূল্যের ভাড়া, অনুপযোগী পরিবেশ কিংবা রুমমেটদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে আসে। কেউ পরিবার থেকে অর্থ সহায়তা পায়, আবার কেউ টিউশনি বা খণ্ডকালীন চাকরির মাধ্যমে নিজের খরচ বহন করে।
বেশিরভাগ মেসেই রান্নার জন্য গৃহকর্মী রাখা হয়, যাদের শিক্ষার্থীরা ‘খালা’ বলে ডাকেন। মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে তারা দু’বেলা খাবার রান্না করে দেন। প্রতিবেলা জনপ্রতি খাবারের খরচ ৫০-৭০ টাকা পর্যন্ত পড়ে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে খাবারের খরচও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে।
শুধু খাদ্যব্যয় নয়, বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, রান্নার গ্যাসের খরচসহ সবকিছুর দাম বাড়ার ফলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত হিসাব কষে খরচ করতে হয়। কেউ কেউ ব্যয় কমাতে খাবারের তালিকা ছোট করছে, কেউবা বাড়তি কাজ খুঁজছে টিকে থাকার জন্য। এছাড়া পানির সংকট, লোডশেডিং, রান্নার গ্যাসের অভাবসহ নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে তাদের দিন কাটাতে হয়।
তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী সাদিক, মহাখালীর একটি মেসে থাকেন ১০ জন মিলে। তিনি বলেন, তিতুমীর কলেজের দুটি ছাত্রাবাস থাকলেও, চালু না হওয়ায় আমাদের মতো অনেক শিক্ষার্থীকে বাইরে মেসে থাকতে হয়। একসঙ্গে থাকলে খরচ কিছুটা কম পড়ে, কিন্তু দিনকে দিন ব্যয় বাড়ায় খরচ সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আঁখি ছাত্রাবাস ও মামুন ছাত্রাবাস চালু হলে আমাদের অনেকটাই খরচ বেঁচে যাবে।
এর আগে ছাত্রাবাস চালুর বিষয়ে তিতুমীর কলেজ প্রশাসন জানিয়েছিলেন আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ শেষ করে দ্রুত সময়ে ছাত্রাবাস চালু করা হবে। তবে দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি ছাত্রাবাস।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available