ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি: ঈদ মানেই আনন্দ ঈদ মানেই খুশি। পবিত্র রমজান মাসের এক মাস রোজার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। ঈদের এই খুশিকে ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে শহরে থাকা মানুষেরা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য স্বল্প বেতনের কারণে এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটি পেয়েও বাড়ি ফিরছে না ঢাকা কলেজের অধিকাংশ কর্মচারী।
ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ২৪ বছর ধরে চাকরি করেন পিয়ন দুলাল হোসেন। ঈদের ছুটির মধ্যে তাকে কাজ করতে হয়। তিনি বলছিলেন, বাড়িতে না গিয়ে ক্যাম্পাসে ঈদ করার অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক সমস্যা। আমরা যে বেতন পাই তা দিয়ে বাড়ি যাওয়া-আসা, বাচ্চাদের পোশাকসহ বিভিন্ন খরচ বহন করা কঠিন। আমরা চাইলেও পারি না। যার কারণে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসে ঈদ করতে হয়। আবার অনেকেই এই অবস্থায় ঋণ নিয়ে বাড়ি গিয়ে ঈদ করে।
তিনি আরও বলেন, স্যারকে একা রুমে রেখে আমরা ঈদ করতে পারব না। কারণ স্যারের সেবা দেওয়া আমাদের মূল দায়িত্ব। অফিসিয়ালি ঈদে অধ্যক্ষ স্যার এবং আমাদের ছুটি আছে। অনেক সময় আমাদের ছুটি থাকা সত্ত্বেও ছুটি কাটানো সম্ভব হয় না। হঠাৎ করে কোন ইমার্জেন্সি কাজ চলে আসলে আমাদের সেই কাজ করতে হয়। এর মধ্যে অধ্যক্ষ স্যার আসলে আমাদেরও তো আসতেই হবে। দীর্ঘ এক বছর পরে আসে ঈদ। এই দিনে ধনী গরীব সবাই সমান আনন্দ নিয়ে ঈদ উদযাপন করবে।
গ্রামে ঈদ উদযাপনের সুযোগ না থাকা ও বেতন বৈষম্যের আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ঢাকাতেই ভালো ঈদ কাটবে। কিন্তু গ্রামের স্বাদ তো আর শহরে পাওয়া যাবে না। বাবা অসুস্থ। আমরা যে স্যালারি পাই তা খুব কম। কিন্তু আমাদের কাজ বেশি। আমরা সবকিছু সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী করি। কিন্তু এক জায়গায় আমরা সরকারের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন, সেটা হলো বেতন। আমাদের চাকরি সরকারি না, আধা সরকারি বলা যায়। আমরা বর্তমানে ৯ -১০ হাজার বেতন পাই। সরকারি কর্মচারিরা আমাদের থেকে দ্বিগুন বেতন পায়। আমাদের এই স্বল্প বেতন দিয়ে এই উর্ধ্বগতির বাজারে চলা কষ্ট। এখন আবার রমজান মাস। সবায় এই মাসে ভালোমন্দ খেতে চায়। কিন্তু আমরা ভালোমন্দ খেতে পারি না। এই বেতনে যতটুকু পারি ভালো খাওয়ার চেষ্টা করি। বাকিটা যদি আল্লাহ রিযিকে রাখে তাহলে খাই। আর নাহলে না খেয়ে থাকি।
কলেজের অফিস সহায়ক হিসেবে ২২ বছর ধরে চাকরি করছেন মোহাম্মদ শাহিন। ঈদ কিভাবে উদযাপন করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছুটি ৬-৭ দিনের তবে এই ঈদে ইনশাল্লাহ বাড়ি যাবো। ঈদ অনুভূতি হলে খুব ভালো লাগে। ঈদে বাড়িতে যাবো, আনন্দ আছে। বাড়িতে ছেলেমেয়ে এবং মা আছে। বন্ধুবান্ধব যারা আছে সবার সঙ্গে একসাথে ঈদ করবো। সবার সাথে ঈদ করা অনেক মজার। ঈদে মায়ের এবং সন্তানদের জন্য কাপড় কিনেছি। বউয়ের জন্য টুকটাক যা পারি কিনেছি।
অফিস সহায়ক হিসেবে কর্তৃপক্ষের কাছে নূন্যতম বেতন বিশ হাজার টাকা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বেতন অল্প ১১০০০ টাকা। এই বেতনে চলতে কষ্ট হয়। এরপরেও আল্লাহ চালাচ্ছে। ঈদে বেতন বোনাস পেয়েছি। সংসারে ছেলেমেয়ে আছে। তাদের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসার চালানো লাগে। এই বেতনে আমরা সন্তুষ্ট না। এতে আমাদের চলা কষ্ট। এটা বেতন বলা যায় না।
কলেজের দুই নম্বর গেটের দারোয়ান জয়দ্বীপ হালদার। ২০১৮ সাল থেকে তিনি দারোয়ানের কাজ করছেন। কর্মস্থলে জীবন ও অভিজ্ঞতার কঠিন বাস্তবতার কথা তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি বলছিলেন, আমাকে ঈদের ছুটি এখনও দেয়নি। তবে ইচ্ছে আছে, এবার ঈদে বাড়িতে যাবো। আমার বর্তমান বেতন ৭২৬০ টাকা। এই বেতনে সংসার কোনোভাবেই চালানো সম্ভব না। একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেও যেখানে দশ হাজার টাকা দিয়ে থাকতে হয়। আমি মাছ কিনতে গেলেও ছোট দেখে মাছ কিনি। সর্বনিম্ন দামের চাল কিনি। আমরা কোনভাবে ডালভাত খেয়ে বেঁচে আছি। এই বেতনে নিজের ভরণপোষণ হয় না ঠিকমতো। কিন্তু এরপরেও আছি কারণ এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কেউ যদি বলে কোথায় চাকরি করি? তাহলে বলা যায় ঢাকা কলেজে চাকরি করি।
বেতন কাঠামোর পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে এই কর্মচারি আরও বলেন, বেতন কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য কোথায় যাবো, কি করবো বুঝতে পারছি না। অধ্যক্ষ স্যার যদি আমাদের জন্য , মুখ তুলে তাকায় তাহলে আমরা তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দেব।
ক্লিনার অভিরাম বলেন, আমি ১২ বছর ধরে এ কাজ করি। যেহেতু এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান তাই আমরাও অন্যান্যদের মতো সরকারি ছুটি পেয়ে থাকি। আমরা অল্প স্যালারি পাই। যা দিয়ে আমাদের চলে না। কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং পরীক্ষার উপরি ইনকাম দিয়ে আমরা চলি। আমাদের এই অল্প বেতন দিয়ে চলা খুব কষ্ট হচ্ছে। স্যারের কাছে বেতন বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। তবে স্যার আমাদের বেতন বাড়ানোর চেষ্টা করে।
কর্মচারীদের বেতনের বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস বলেন, " বছরে দুইবার কি আর বেতন বাড়ানো যায়। আমাদের কলেজের সরকারি কর্মচারী সর্বোচ্চ ৩০ জন। এই কর্মচারীদের দিয়ে কলেজের সব কাজ হয় না। এজন্য আরও ১৬০ জনের উপরে বেসরকারি কর্মচারী রয়েছে । ছাত্ররা কলেজে যে বেতন দেন, সেখান থেকে বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। যদি তাদের বেতন বাড়ানোর সুযোগ থাকে, তাহলে বাড়াবো না কেন। কিন্তু আমরা যদি তাদের বেতন বাড়াতে চাই, তাহলে চাপ পড়বে ছাত্র বেতনের উপর। এজন্য আমরা তাদের বেতন বাড়াতে চাইলেও পারি না।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available