কালের সাক্ষী জামালপুর গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি মসজিদ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির মসজিদটি মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরাতন কারুকার্যময় এ মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিভৃত পল্লীতে এর অবস্থান হলেও মানুষের কাছে এর আকর্ষণ কমেনি। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদটি একনজর দেখার জন্য এখানে পর্যটকরা ভিড় করেন।ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে জামালপুর গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটি স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। নয়নাভিরাম এই মসজিদটির আকর্ষণীয় দিক হলো এটি মুঘল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি। তিন গম্ভুজ বিশিষ্ট মসজিদটির চারপাশে সুদৃশ্য মিনার ও কারুকার্য খচিত। গম্ভুজসমূহ ভল্ট কায়দায় নির্মিত।স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, প্রথমে জমিদার আবদুল হালিম ও পরে হাজি নুনু মোহাম্মদ ১৮৬৭ সালে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। হাজি নুনু মোহাম্মদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর এই মসজিদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পড়ে জমিদার এমদাদুর রহমান চৌধুরী, জমিদার করিম উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী ও জমিদার বদিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরীর উপর।তিনটি গম্বুজ ও এর চারদিকে ৩০টি ছোট-ছোট মিনার রয়েছে এ মসজিদে। এর প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন হংসরাজ ও তার ছেলে রামহিত নামে দুই হিন্দু মিস্ত্রী। তারা দিল্লি, আগ্রা, এলাহাবাদে নির্মিত মুসলিম ঐতিহ্যের বিভিন্ন কারুকার্যের অনুকরণে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। এর বারান্দা ২টি। প্রথম বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১২ ফুট ৩ ইঞ্চি। দ্বিতীয় বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৯ ফুট ৫ ইঞ্চি। সামনে একটি খোলা আঙিনা রয়েছে। মসজিদটিতে স্থানীয় বাসিন্দারা এখনো নামাজ আদায় করেন। একসাথে ২০০ মুসল্লী এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের খাদেম রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এটি অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এই মসজিদ ও মসজিদের সাথে যাদুঘর ও জমিদারদের পুরোনো সংগ্রহশালাটি দেখতে প্রতিদিনই হাজার-হাজার মানুষ ভিড় জমান এখানে। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে ও মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলে দীর্ঘ সময় মসজিদটির সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। মসজিদ কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে এই মসজিদকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি।ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির মসজিদটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কালের স্বাক্ষী হয়ে দীর্ঘকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে টুরিজম বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে এই ঐতিহাসিক মসজিদটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কাজও চলমান রয়েছে। আশা করি, অনতি বিলম্বে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এ মসজিদটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।তাছাড়া মসজিদ কমিটির মাধ্যম্যে মসজিদের উন্নয়ন ও এর ঐতিহ্য রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।