• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১৫ই চৈত্র ১৪৩১ রাত ০১:২০:৩৩ (30-Mar-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১৫ই চৈত্র ১৪৩১ রাত ০১:২০:৩৩ (30-Mar-2025)
  • - ৩৩° সে:

পানির দামে বেচতে হচ্ছে আলু, ঈদেও বিষণ্ন চাষিদের মুখ

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: ‘আলুর দাম তো ওঠোইছে না, ঈদ করমু ক্যাংকা করে?’ কথাগুলো বলতে বলতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায় জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ধারা-গাংগট গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলামের।২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে পুনট হাটে দাঁড়িয়ে তিনি জানালেন, এবারের আলু চাষ তার জন্য যেন অভিশাপ হয়ে এসেছে। প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ২১-২২ টাকা, অথচ বাজারে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯-১০ টাকায়। এতে করে লাভের কথা দূরে থাক, উৎপাদন খরচই উঠছে না।তরিকুলের মতো একই অবস্থা উপজেলার বানিহারা গ্রামের কৃষক হায়দার আলির। চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন তিনি। ফসল তোলার পর যখন বাজারে নিয়ে গেলেন, দেখলেন দাম নেই। হিমাগারেও সংরক্ষণের সুযোগ পাননি। কারণ জায়গা সংকট। বাধ্য হয়ে আলু বাড়ির আঙিনায় রেখে দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে আলু ভালো থাকে না। রাতে মশার অত্যাচারে মশারি টাঙিয়ে আলুর পাহারা দিতে হয় তাকে। ঈদ সামনে, অথচ হাতে টাকা নেই। হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘হামার মত অনেকেই আলু নিয়ে বড় বিপদে আছে। তা'ইলে তোমরাই কও, এবার ঈদ করমু ক্যাংকা করে?’একের পর এক কৃষকের একই দুর্দশার গল্প শোনা যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পুরো উপজেলায় প্রান্তিক কৃষকদের মুখে হাসি নেই, ঈদের আনন্দ নেই। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করছেন। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, লোকসান সামলে সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।পুনট হাটে এদিন বেচাকেনা খুবই কম। ঈদের আগে যেখানে বাজারে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়, সেখানে এবার দোকানিরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কালাই আহলে হাদীস মসজিদ কমপ্লেক্স মার্কেটের চায়না ফ্যাশনে কাপড় কিনতে এসেছিলেন বানিহারা গ্রামের কৃষক ছামসুল হক। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তিনি কাপড় দেখছিলেন, কিন্তু দাম দেখে যেন হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। বললেন, ‘ছল-পল (ছেলে-মেয়ে) ছাড়ে না, তাদের জন্য ১০ টাকা কেজিতে লোকসান করে ১৫ বস্তা আলু বেছিছু। কিন্তু যে দাম, জামাত তো  হাতই দেয়া যাওছে না।’বাজারে ব্যবসায়ীরাও হতাশ। চায়না ফ্যাশনের মালিক হিটলার রহমান জানান, গত বছর যেখানে প্রতিদিন দেড়-দুই লাখ টাকা বিক্রি হত, হাটের দিনে আড়াই লাখ টাকার বেশি বেচাকেনা হতো, এবার সেখানে মাত্র ৫০-৬০ হাজার টাকার ব্যবসা হচ্ছে। মানুষের হাতে টাকা নেই, তাই দোকানেও ভিড় নেই।কৃষক হেলাল উদ্দিন বললেন, ‘মুই দুই মণ আলু বেচে ছলের জন্য এক জোড়া জুতা কিনিছু। হাটোত সব জিনিসের দাম বেশি। কিন্তু হামাগেরে আলুর দাম নাই। যত সব ঝামেলা হামাগেরে মত কিষান-পাটের।’এই হতাশা শুধু তরিকুল, হায়দার, ছামসুল, হেলালের একার নয়। কালাইয়ের হাজারো কৃষক একই সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিবার উৎপাদিত ফসলের টাকায় সারা বছরের খরচ চালাতেন তারা। কিন্তু এবার সব হিসাব এলোমেলো হয়ে গেছে। ঈদের আগে এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের মন ভেঙে পড়েছে। কৃষকদের প্রশ্ন, ‘যদি ফসলের ন্যায্য দাম না পাই, যদি কষ্টের ফসল লোকসানে বিক্রি করতে হয় তবে আমাদের ঈদ আনন্দ থাকবে কেমন করে?’