ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) লালন শাহ হল ও পার্শ্ববর্তী মেসে নবীন শিক্ষার্থীদের টানা ১৭ দিন র্যাগিংয়ের ঘটনায় সিনিয়র ৯ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তারেক। মামলার পর ৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উক্ত মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাব্বির হোসেন, লিমন হোসেন, শেহান শরীফ, কান্ত বড়ুয়া, শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, জিহাদ এবং ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সঞ্চয় বড়ুয়া। অভিযুক্ত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া ও সঞ্চয় বড়ুয়াকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ইবি থানায় আটক থাকা ৫ শিক্ষার্থীকে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ‘চালান’ করা হয়। দণ্ডবিধির ৩২৩, ৫০৬ নং ধারা অনুযায়ী মামলা হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ঘটনা তদন্তে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক ও সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমানকে সদস্য সচিব করে গঠিত ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফখরুল ইসলাম ও হলের আবাসিক শিক্ষক রসুল করিম। উক্ত কমিটিকে আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে তাদের র্যাগিং করে আসছিলেন। তারা ভুক্তভোগীদের প্রতি অশোভন অঙ্গভঙ্গি, বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদানসহ নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন।
ভুক্তভোগী তারেক হোসাইন বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি ১৭ দিন। তারা আমাদের ১৭ দিনে কী পরিমাণ মানসিক নির্যাতন করেছে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা এসবের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
আরেক ভুক্তভোগী ছাত্র রাকিব বলেন, ‘আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা তাদের শাস্তির দাবি জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘র্যাগিংয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে, তবে মামলার বিষয়টা আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ফরিদ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘র্যাগিংয়ে জড়িতদের পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়। ভুক্তভোগীদের একজন বাদী হয়ে এ বিষয়ে মামলা করেছে। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আটক ৫ জনকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার মধ্যরাতে লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে (গণরুম) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন আমির হামজা, শামীম রেজা, রাকিবুল হাসান, আবু সাইম। চুপচাপ থাকায় ভুক্তভোগীদের একজনকে ৫ রকমের হাসি দিতে বলা হয়, অপর একজনকে সিনিয়র ভাইকে কল দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনকে নাচতে বলেন অভিযুক্তরা।
এছাড়াও, গত ১৬ নভেম্বর রাতে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পর্ণ তারকাদের নাম জিজ্ঞাসা ও তাদের রোল প্লে করতে বলা, অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো এবং গালিগালাজ করেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available