স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে। কৃষকরা রাত জেগে পাহাড়া বসালেও চুরি ঠেকাতে পারছেন না। এরই মধ্যে ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে পূর্বধলার আগিয়া ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের চারটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে দুর্গাপুর উপজেলার কেট্টা গ্রামে এক রাতে তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এর পেছনে পল্লী বিদ্যুতের কতিপয় অসাধু কর্মচারীদের হাত থাকতে পারে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় অন্তত ১১৯টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। এতে করে কৃষিজমিতে সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন গ্রামের কৃষকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতায় প্রায় ৬ লাখ ৩৩ হাজার গ্রাহকের জন্য ২৯ হাজার ৫১১টি ট্রান্সফরমার আছে। এর মধ্যে সেচ কাজে ১৬ হাজার ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পর পর এসব ট্রান্সফার চুরি হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পূর্বধলার বাড্ডা গ্রামের কৃষক মো. মুখলেছুর রহমান খান, নাজিম উদ্দিন খান, এনায়েত খান, জাকির আহম্মেদ খানের ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যায়।
ওই গ্রামের কৃষক মুখলেছুর রহমান খান জানান, ‘মঙ্গলবার গভীর রাতে আমাদের চারটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে। পরদিন ভোরে গিয়ে দেখা গেছে খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমারের খোলস নিচে পড়ে আছে। ভেতরের তারসহ যন্ত্রপাতি নিয়ে গেছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক জাকির আহম্মেদ খান বলেন, ‘চুরি যাওয়া চারটি ট্রান্সফরমারের সাহায্যে গ্রামের শতাধিক কৃষকের জমিতে সেচ দেয়া হতো। এখন বোরো মৌসুম চলছে। জমিতে পানি দিতে না পারলে চাষ করা যাবে না। সহজে নতুন ট্রান্সফরমার পাওয়া যাবে না। এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’
স্থানীয়রা জানান, এর আগের সাত মাসে শুধু পূর্বধলা উপজেলায় অন্তত ২৮টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও আইশৃঙ্খলা বাহিনী চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার উদ্ধার করতে পারেনি। এর জন্য খেসারত দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। কারণ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমবার চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার পুনরায় স্থাপন করতে গ্রাহককে নতুন ট্রান্সফরমারের অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। দ্বিতীয়বার চুরি হলে ট্রান্সফরমারের সম্পূর্ণ মূল্য বহন করতে হয় গ্রাহকদের। ট্রান্সফরমার চুরি হলে মূল্য পরিশোধের পরও নতুন করে ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত লেগে যায়। এ সময়টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয় গ্রাহকদের। এতে এক দিক দিয়ে কৃষকদের যেমন টাকা খরচ হয়, অন্যদিকে ট্রান্সফরমারের অভাবে সেচকাজ বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদনের খরচও বেড়ে যায়।
বাড্ডা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘কয়েক দিন পর পরই ট্রান্সফরমার চুরি হয়। আমাদের ধারণা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অসাধু কর্মচারীরা ট্রান্সফরমার চুরির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। কারণ, সাধারণ মানুষের পক্ষে ট্রান্সফরমার চুরি করা সম্ভব নয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাসুম আহমেদ বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। আমাদের হিসাব অনুযায়ী গত এক বছরে জেলায় ১১৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৬২ লাখ টাকা। তবে চুরির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এটা মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এসব কথা বলা উচিত নয়।’
নেত্রকোনা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available