ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি: পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ছিনতাইয়ের লিখিত অভিযোগ তদন্তে গিয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক, অভিযোগকারী ও তার আত্মীয়দের বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পিটিয়েছেন।
১০ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গুড়া স্মৃতিসৌধ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম নুরু, হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের ছাত্রদলের আহ্বায়ক বাইজিদ, ছাত্রদলের সদস্য সচিব ডাবলু, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক পরি, অভিযুক্ত জাহিদ ও তার সহযোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কান্দাপাড়ায় এলাকার বাসিন্দা আসিফ ভাঙ্গুড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ভাঙ্গুড়ার ছাত্রদল কর্মী জাহিদ তার গলায় চাকু ঠেকিয়ে তার কাছ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়েছে। আসিফ ভাঙ্গুড়া উপজেলার উপজেলা পাড়ায় একটি অনলাইন ফার্মে ফ্রিল্যান্সিং শিখতেন।
১০ জানুয়ারি শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে অভিযোগকারী আসিফসহ তার কয়েকজন আত্মীয় অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করতে ভাঙ্গুড়া থানায় আসেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য তদন্তকারী এস আই সুব্রত কুমার ও এসআই আল আমিন অভিযুক্ত জাহিদকে মোবাইল ফোনে ডেকে পাঠান।
থানা পুলিশের ফোন পেয়ে অভিযুক্ত জাহিদ ভাঙ্গুড়া থানার অদূরে স্মৃতিসৌধ এলাকায় পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সালাম নুরু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক হুমায়ুন কবির, হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের ছাত্রদলের আহ্বায়ক বাইজিদ, ছাত্রদলের সদস্য সচিব ডাবলু, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক পরি, ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হুমায়ুন আজাদ মুন, ছাত্রদলের সদস্য সচিব লিখন সরকার, জীম, অভিযুক্ত জাহিদ ও সজলসহ কয়েকজন ছাত্রদল কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন।
ঘটনাস্থলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সুব্রত কুমার জাহিদের কাছে ছিনতাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা নুরু উত্তেজিত হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে আসিফের আত্মীয়দের মারধর শুরু করেন তারা। এ সময় উপস্থিত এসআই সুব্রত কুমার ও এসআই আল আমিন বাধা দিতে গেলে তাদেরকেও মারধর করেন।
এ ঘটনা জানতে পেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভাঙ্গুড়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল করিমের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মারধরে আসিফের আত্মীয় শাকিল গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানেও বিএনপি-ছাত্রদলের নেতারা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে চিকিৎসা নিতে না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে থানার দ্বিতীয় তলায় গভীর রাতে উভয় পক্ষকে নিয়ে আপস-মীমাংসা বৈঠক হয়। সেখানে মোবাইল ও টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বলেন, ‘অভিযোগের তদন্তে অভিযুক্ত জাহিদকে ডেকে আনলে বিএনপি নেতা নুরু ও তার সহযোগীরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং অভিযোগকারীদের মারধর করে। আমি ও আমার সহকর্মী তাদের বাধা দিতে গেলে আমাদেরকেও তারা মারধর করে।’
বিএনপি নেতা নুরু বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা সুব্রত জাহিদকে থানায় না নিয়ে স্মৃতিসৌধ এলাকায় অন্য উদ্দেশ্যে এনেছিলেন। আমি কাউকে মারধর করিনি। আমাদের কিছু ছোট ছেলেরা মারধর করেছে, যাদের আমি চিনি না।’
অভিযোগকারী আসিফের ভাই রাহুল বলেন, ‘আমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা ভাঙ্গুড়া থানায় আসি। কিন্তু তারা পুলিশের উপস্থিতিতে পুলিশ ও আমাদের মারধর করে আহত করেছে। তাহলে অন্যায় করলে তার বিচার চাইব কোথায়?’
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ তাদের টার্গেট নয়। তবে ঠেকাতে গেলে একটা অবস্থা সৃষ্টি তো হবেই। দলের মধ্যে একটা পক্ষ এটাকে অতিরিঞ্জিত করার চেষ্টা করছেন। ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ওই ঘটনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available