জামালপুর প্রতিনিধি: জমালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কাহেতপাড়া এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় আক্তারুজ্জামান স্বপন নামে এক ব্যক্তি তার বাম চোখ হারিয়েছেন এবং কান কাটা অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তিনি ওই এলাকার মৃত ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে।
গুরুতর আহত আক্তারুজ্জামান বর্তমানে ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। আক্তারুজ্জামান শুধু একা নন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তার ১৪ বছরের সন্তানসহ পরিবারের আরও ৫ জন সদস্য।
এ ঘটনায় তার ছোট বোন অ্যাডভোকেট মাসুমা পারভীন বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে মেলান্দহ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের কাহেত পাড়ায় ভুক্তভোগী আক্তারুজ্জামানের পৈতৃক মালিকানাধীন জমি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ক্ষমতার জোরে ভোগদখল করছে মামলার আসামি মৃত ইউসুফ আলী সরকারের ছেলে মো. শহিদুল্লাহ গংরা। এ বিষয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা চলমান থাকলেও গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে আক্তারুজ্জামান তাদের মালিকানাধীন ওই জমিতে ধান রোপণ করতে গেলে বিবাদী পক্ষ মো. শহিদুল্লাহ ও তার ছেলে রাকিবুল ইসলাম শান্ত'র নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আক্তারুজ্জামান ও তার পরিবারের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় শহিদুল্লাহ গংরা ভুক্তভোগীদের এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। আসামিদের দায়ের কোপে ভুক্তভোগী আক্তারুজ্জামানসহ তার পরিবারের ৬ জন গুরুতর আহত হন। আসামি রাকিবুল হাসান শান্তর দায়ের কোপে আক্তারুজ্জামানের বাম চোখ, নাক ও তার পিতা শহিদুল্লাহর দায়ের কোপে বাম কান কেটে যায়।
এ সময় স্থানীয়রা আহতের উদ্ধার করে প্রথমে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ২ জনের চিকিৎসা চললেও গুরুতর আহত বাকি ৪ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা। গুরুতর আহত আক্তারুজ্জামানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে পরবর্তীতে তাকে ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়।
ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের চিকিৎসকরা জানান, গুরুতর কাটা জখম নিয়ে আক্তারুজ্জামান চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। তার চোখসহ নাকের হাড় ও কান অনেকটাই কেটে গেছে এবং বাম চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। চোখ ছাড়াও নাকের হাড় ও কান কেটে যাওয়ায় তাকে চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে চিকিৎসার পর জাতীয় অর্থোপেডিকস হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আসামী শহিদুল্লাহ গংরা ভুক্তভোগী আক্তারুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এসব বিষয়ে পূর্বেও একাধিকবার শহিদুল্লাহ গংরা আক্তারুজ্জামান ও তার পরিবারে উপর হামলা করেছেন। একটি নিরীহ পরিবারের উপর এমন বর্বর হামলার সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন এলাকাবাসী।
তারা আরও জানান, বিরোধপূর্ণ জমি ভুক্তভোগী আক্তারুজ্জামানের পারিবারিক মালিকানাধীন জমি। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে শহিদুল্লাহ গংরা এ জমি জবরদখল করে রেখেছিল। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও পূর্বেরন্যায় শহিদুল্লাহ গংরা আক্তারুজ্জামানদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
মামলার বাদী আইনজীবী মাসুমা পারভীন জানান, আসামিরা এর আগেও বিভিন্ন সময় তাদের উপর হামলা করেছে। তবে এবার আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে তার ভাই ও নাবালক ভাতিজাসহ পরিবারের মোট ৭ জন সদস্যকে কুপিয়ে মাথা, চোখ, নাক ও কান কেটে আলাদা করে মারাত্মক জখম করেছে। শিক্ষক রাকিবুল হাসান শান্তর দায়ের কোপে তার ভাইয়ের বাম চোখ কেটে নষ্ট হয়ে গেছে। এসময় দেশের বিচার বিভাগের কাছে হামলার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকলকে গ্রেফতারসহ উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, আসামি রাকিবুল হাসান শান্ত স্থানীয় বীর সগুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং তার পিতা শহিদুল্লাহ একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
বাদী অ্যাডভোকেট মাসুমা পারভীন আরও জানান, মামলার ১নং আসামি মো. শহিদুল্লাহর আপন বোন ও ২নং আসামি রাকিবুল হাসান শান্ত'র আপন ফুপু ফরিদা বেগম জামালপুর সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র নার্সকে দিয়ে মিথ্যা বানোয়াট মেডিকেল সার্টিফিকেট ম্যানেজ করে মিথ্যা মামলা দিয়ে উল্টা জেল খাটানোর হুমকি দিয়ে আসতেছে।
এ বিষয়ে মামলার বিবাদী মো. শহিদুল্লাহ ও তার ছেলে রাকিবুল হাসান শান্ত'র মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে নাম্বার দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে এবং এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available