কামরুজ্জামান ডালার, বরিশাল প্রতিনিধি: বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটার সম্ভাবনা নিয়ে গর্বিত পথচলার দেড় বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশের নিজ অর্থায়নে তৈরি ঐতিহ্যের পদ্মা সেতু।
খুলনা ও বেনাপোল অংশের বাণিজ্যিক সুবিধা এতে বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও পণ্যবাহী ট্রাকগুলো এখনো এড়িয়ে চলছে এ সেতু। তারাপদ্মা সেতুর তুলনায় আরিচা হয়ে ফেরি পারাপারকে সহজ ও সাশ্রয়ী মনে করছে।
এদিকে এই সেতুকে ঘীরে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাসহ ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ এলাকার মানুষের চোখেমুখে এখনো স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা ঝুলছে। এজন্য প্রয়োজন বরিশাল বিভাগীয় শহরের বাণিজ্যিক অবয়ব তৈরি বলে দাবি সুশীল সমাজের।
২০২২ সালের ২৫ জুন বহুল কাঙ্খিত এই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে সরাসরি ঐশীয় সড়কে সম্পৃক্ত করতে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি। পদ্মা সেতু হয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবার পর গত বছর ১ নভেম্বর খুলনা থেকে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও পরদিন ২ নভেম্বর বেনাপোল থেকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল শুরু করে।
এরমধ্য দিয়ে খুলে যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ভাগ্যের চাকা। ট্রেনে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে উচ্ছ্বসিত সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখানেও বঞ্চিত থেকে যায় বরিশাল। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর গত দেড় বছরে মোট টোল আদায় হয়েছে ১ হাজার ১৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকারও বেশি। গত ১৮ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, যান চলাচলের দিন থেকে ১৬ ডিসেম্বর শনিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরার দুই টোল প্লাজা মিলে ১ হাজার ১৮৬ কোটি ৮২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস ২৫ দিনের মাথায় সেতুর টোল আদায় এক হাজার কোটি টাকা ছাড়ায় বলে জানান তিনি।
এটা স্বপ্নের বাস্তবায়নের স্বার্থকতা এবং সেতুর বাণিজ্য ভালো হয়েছে দাবি করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, পরিবহন চালকদের মাথায় টোলের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে দেড়বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আয় দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু ব্যয়টা কি দেখাচ্ছে।
অপরদিকে পণ্যবাহী বেশিরভাগ ট্রাকই কিন্তু অতিরিক্ত টোলের ভয়ে এখনো আরিচা ফেরি নির্ভর বলে দাবি বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের।
তিনি বলেন, বিএনপি বরিশালকে বিভাগ করেছে। এরপর যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার সবটাই বিএনপির পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়েছে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, স্বপ্নের পথে হাঁটতে একটু সময় লাগে। পদ্মা সেতুর সুফল পেতে আমাদের সবার আগে গ্যাস প্রয়োজন। সরকার ভোলা থেকে গ্যাস আনার বিষয়ে অলরেডি কাজ শুরু করেছে।
বরিশাল ৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম তার প্রতিটি জনসভায় বরিশালবাসীকে গ্যাস ও ইপিজেডসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। নির্বাচনে দ্বিতীয়বারও জয় লাভ করার আনন্দ নিয়ে তিনি বলেছেন, মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে সাথে নিয়ে এই বরিশালকে অনন্য উদাহরণ হিসেবে তৈরি করবেন। তিনি এখানে গার্মেন্টস শিল্প স্থাপনের অঙ্গিকার করেছেন।
জাতীয় পার্টির নেতা প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি শাহ সাজেদা, এনায়েত হোসেন শিবলু, কাজী মিজানুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দের দাবি পদ্মা সেতুর সুফল পেতে বরিশাল বিভাগের পাশাপাশি ছয় জেলায় অবকাঠামো ও শিল্পায়ন ঘটাতে হবে।
শাহ সাজেদা এবং কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ভোলার গ্যাস দ্রুত বরিশালে আসতে হবে এবং ঢাকার উপর থেকে চাপ কমাতে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এখানের ১১ জেলাতেই রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।
এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর টোল আদায় দেড় বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণে ইতোমধ্যেই খরচ হয়েছে ১৪২ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ২৫ টাকা। এটা সেতু বিভাগের হিসাব। এদিকে ঢাকার উপর চাপ কিন্তু আগের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি বলবো সরকারের উচিত ঢাকামুখী জনস্রোত থামানো। বরিশাল আর খুলনাই নয়, প্রতিটি জেলা শহরে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ নেয়া উচিত।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available