নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে কীভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে বিভিন্ন দেশ, কীভাবে মৃত্যুভয় তাদেরকে তাড়িত করছে সেখানকার জনগণকে; তারই উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ‘৭১ ফাউন্ডেশন’। ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই 'সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী'।
প্রদর্শনীতে ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়ার মতো দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের কারণে কীভাবে বিপর্যস্ত সেটি তুলে ধরা হয়। এসব দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ ছবিগুলোতে ফুটে ওঠে। সিরিয়ার নারী ও শিশুদের কান্না, ফিলিস্তিনের ধ্বংসাবশেষে কেড়ে নেওয়া প্রাণ, আধুনিক একটি শহর কিভাবে ধুলায় মিশে গেছে তারা প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে প্রদর্শনীতে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের শ্লোগানের আড়ালে সাম্রাজ্যবাদ চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. এজিএম শফিউল আলম ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়েছে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কারা তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে যেখানেই যা ঘটুক যুদ্ধ, সংঘাত, কোনোটাই সাম্রাজ্যবাদের ইশারা ব্যাতিত ঘটে না। সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ যেখানে ক্ষুণ্নু হয়, সেখানেই সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধের দামাম বাজিয়ে তোলে। তারা সেখানে দুটি স্লোগানকে সামনে নিয়ে আসে, তারা বলে তারা সারাবিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা বলে তারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেহেতু তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে,তাই সাম্রাজ্যবাদের চেহারা সাধারণ মানুষের কাছে তেমন একটা আসে না। তারা গণতন্ত্র মানবাধিকারের কথা বলে আফগানিস্তান,ইরাক,ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাঙালির ইতিহাস সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের ইতিহাস। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে পরাভূত করবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে।’
সংহতি প্রকাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমরা অনেক সাম্রাজ্যবাদের কথা জানি। এসকল সাম্রাজ্যবাদের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের সাবলম্বী করা, অন্য দেশের অর্থনৈতিক সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের উন্নয়ন করা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বাংলাদেশ নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কেন? কারণ ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে একটি বড় শক্তিশালী দেশ। সেজন্য মার্কিনরা চাচ্ছে বাংলাদেশ যেনো চীন কিংবা রাশিয়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুবিধা নিতেই তারা ভিসা নীতিসহ বিভিন্ন নীতি আরোপ করছে।’
৭১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খালেদ শওকত আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি বাক্যে সাম্রাজ্যবাদকে চিহ্নিত করে গেছেন। তিনি বলেছিলে,পৃথিবী আজ দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে। আমরা সেই বঙ্গবন্ধুর সেই দেখানো পথে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এই ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন স্পষ্ট করে বলতে চায়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী জিয়াউর রহমান, সাহায্যকারী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।’
এসময় সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহিম, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী। এছাড়াও সংহতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী যুব লীগসহ আরো অনেকে। এছাড়াও উপস্থিত দর্শকরা মোমবাতি প্রোজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
এসময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পাকিস্তানকে অস্ত্র, অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে। আমাদের স্বাধীনতাকে শেষ মুহূর্তেও বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের দেশে যখন সামরিক স্বৈরশাসকরা ক্ষমতায় ছিল তখন তাদের সুরক্ষা দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। বর্তমানে বাংলাদেশের যে চিত্র দেখি, সেটা হচ্ছে জনগণ ভাগ্য নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব নির্ধারণ হয় জনগণের ভোটের মাধ্যমে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে আমরা ধিক্কার জানাই। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়াতে চায়, আমরা দলমত নির্বিশেষে রুখে দাঁড়াতে চাই।’
সকাল নয়টা থেকে শুরু হয় এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এরপর এই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিকাল পাঁচটায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব ও আলোচনা অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক পর্বের সঞ্চালনা করেন ম আলমগীর।
এই পর্বে প্রথমে গান পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পী দল, শিল্পকলা একাডেমির শিশুনৃত্য শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর একক গান পরিবেশন করেন ফাহমিদা রহমান, কণ্ঠশিল্পী হিমাদ্রি। এরপর 'মানুষ হ' গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পী দল। পরে একক সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সুচিত্রা ও রাফি তালুকদার। অনুষ্ঠানের সর্বশেষ মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সবাই সংহতি প্রকাশ করে।
আয়োজকরা জানান, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে আগ্রাসনী শক্তির আসল চেহারা জনগণের সামনে উন্মোচন করে তাদের অপতৎপরতা বিষয়ে সজাগ থাকতে উদ্বুদ্ধ করাই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available