নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, গুলশান, বনানী এবং বারিধারাতে ইউনিসেফের মাধ্যমে একটি সার্ভে পরিচালনা করে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম, বারিধারার শতকরা ৯০ ভাগ আবাসিক ভবনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কোনো পরিকল্পনা নাই, ফলে সে সকল ভবনের সকল ময়লা পানি খালে এসে পড়ছে। এটা অনেক দুঃখের বিষয় যে, আমাদের শহরে অনেক নাগরিক থাকলেও সুনাগরিকের বড়ই অভাব।
১৮ নভেম্বর শনিবার ঢাকাস্থ প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস ২০২৩ উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, এবারের বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবসের প্রতিপাদ্য Learn Globally, Apply Locally বর্তমান বাস্তবতায় খুবই যুক্তিযুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত আছে, যার প্রতিফলন সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। আসলেই আমাদের প্রথমে বুঝতে জনগণ কী চায়? জনগণ খাল চায়, নৌপথ চায়, খালে মাছ চাষ চায়, খালের দুপাশে হাঁটার রাস্তা এবং সাইকেল লেন চায়।
গত ৮ নভেম্বর একটি ওয়েবিনার আয়োজনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এবারের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল/গ্রামীণ পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পরিকল্পনা শিক্ষার্থী এবং বিআইপি সদস্যদের অংশগ্রহণে উন্মুক্ত আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থিসিস প্রতিযোগিতা, দেশের ৫টি শহরের (ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং পাবনা) উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নগর পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় সেমিনার আয়োজন অন্তর্ভুক্ত আছে। এবছর বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে, Learn Globally, Apply Locally।
এরই ধারাবাহিকতায়, ১৮ নভেম্বর শনিবার ঢাকাস্থ প্ল্যানার্স টাওয়ারে বিআইপি কনফারেন্স হলে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস ২০২৩ উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) উদ্যোগে এবং ইউএন-হ্যাবিটেট ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সহযোগিতায় একটি জাতীয় সেমিনার আয়োজন করা হয়। বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এছাড়াও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)'র চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন নগর সাংবাদিক উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে পরিকল্পনাবিদ মো. আনিসুর রহমান, পরিকল্পনাবিদ রিদমা কুদ্দুস, পরিকল্পনাবিদ রিফাহ্ মাশিয়াত জেন এবং ইউএন-হ্যাবিটেট বাংলাদেশের রিজিওনাল অফিস ফর এশিয়া এন্ড দ্য প্যাসিফিকের কারিগরী উপদেষ্টা প্রিয়াঙ্কা কোচার।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, সেমিনারে উপস্থাপিত প্রত্যেকটি উপস্থাপনাই চমৎকারভাবে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে অনেক বাস্তবতা দেখিয়ে দিয়েছে। ঢাকা শহরের খালসমূহ পুনরুদ্ধারে দুই সিটি কর্পোরেশনের সকল প্রকল্পই ইতোমধ্যে একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এখন কারও তোয়াক্কা না করে নির্ভীকভাবে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা গেলেই ঢাকা সকল খাল পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান মিঞা বলেন, বিভিন্ন সময়ে ঢাকা শহরের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হলেও সর্বশেষ বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (২০২২-২০৩৫) বিশদভাবে এ শহরের পরিকল্পনা করা হয়। আজকের প্রথম উপস্থাপনাটি খুবই সুন্দর হয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, বিশ্বের বিভিন্ন শহরে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কী ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের শহরকে কীভাবে রক্ষা করতে পারি। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের যাত্রার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের যে সূচনা হয়েছে ২০২৮ সাল নাগাদ তা পরিপূর্ণতা পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কনস্ট্রাকশন রেজিলিয়েন্স এর ব্যাপারে বহু বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও ইলেক্ট্রনিক পারমিটিং সিস্টেম প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আজ ১৮ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর হচ্ছে। এখন থেকে এই সিস্টেমের মাধ্যমে ভবনের অকুপেন্সি সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে রাজউক এর পাশাপাশি ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদেরও সমান দায়বদ্ধতা নিতে হবে।
সেমিনারে বিআইপি সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, বাংলাদেশে ১৯৫৯ সাল থেকে যত ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা সঠিকভাবে হলেও তার প্রয়োগ সঠিক ভাবে হচ্ছে না। সারা বাংলাদেশে ৮০ ভাগ নগরায়নের যে লক্ষ্য করা হয়েছে, সেজন্য সরকারের সকল প্রকল্পকে অবশ্যই পরিকল্পনার কাঠামোর আওতায় আনতে হবে, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক থাকতে হবে এবং এই সকল তথ্য আমরা সুগঠিতভাবে বাংলাদেশের জন্য একটি স্থানিক পরিকল্পনা কাঠামোর মাধ্যমে প্রস্তাব করেছি। Spatial Planning Framework নামক এই কাঠামো প্রস্তাবটি বিশ্বের বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যেমে যথাযথ রিভিউ ও একাধিক পরামর্শ কর্মশালার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সারাদেশের সবগুলো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত ও প্রণয়ন করা হয়েছে। ঢাকা শহরে তথা সারাদেশে পরিকল্পনা বিষয়ক গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমরা বিআইপির পক্ষ থেকে সকল কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে বদ্ধপরিকর। সকলকে বিআইপি’র পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য সম্পন্ন করেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় বিআইপি উপদেষ্টা পরিসদের সদস্য মোহাম্মদ শওকত আলী খান বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্ভোগের মাঝে একটি ভারসাম্য আনতে হবে। আমাদের সকলকে ভাবতে হবে, আমাদের জাতীয় গাইডলাইনে কী বলা হয়েছে এবং এর বিপরীত কিছু করলে আমাদেরই বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available