ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি: আঠারশো শতকে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা যখন আধারে নিমজ্জিত তখন অগ্নীশিখা হয়ে জ্ঞানের আলো জ্বালাদে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের। ১৮৪১ সালের আজকের দিনে ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন অক্সফোর্ডের শিক্ষক বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল। বাংলার প্রথম কলেজটি কালক্রমে ১৮২ বছরে পেরিয়ে ছড়াচ্ছে জ্ঞানের আলো।
প্রশ্ন রাখা যেতে পারে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কতটুকু এগিয়েছে ঢাকা কলেজ?
সুধীজনরা বলেন ঢাকা কলেজের যেভাবে রাজকীয় অর্বিভাব ঘটেছিল পরবর্তীতে সে প্রত্যাশা পূরণে বিচ্যুতি ঘটেছে। একইসাথে কলেজটিতে দৃশ্যমান অবকাঠামোগত তেমন কোন উন্নয়ন ঘটেনি। রয়েছে ক্লাসরুম সংকট, ছাত্রবাস সংকট, বিজ্ঞানের ছাত্রদের ল্যাবের অপ্রতুলতাসহ অভ্যন্তরীণ নানান সমস্যা।
বর্তমানে মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়নরত। গত একশো বছরে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬ গুন । স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পূর্বে ২১ টি বিষয় চালু থাকলেও এখন ১৯ টি বিষয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু আছে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, প্রাণীবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পরিসংখ্যান, হিসাববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, অর্থনীতি, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ এবং দর্শন।
শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধায় রয়েছে ৯টি বাস। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধায় রয়েছে ৮টি ছাত্রাবাস। সেগুলো হলো উত্তর ছাত্রাবাস, দক্ষিণ ছাত্রাবাস, পশ্চিম ছাত্রাবাস, আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছাত্রাবাস, শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাস, দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাস ও শহীদ শেখ কামাল ছাত্রাবাস।
সোমবার কলেজের ১৮২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত হয়ে ঘুরে আবারও কলেজের প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়। এতে সকল বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেয়। কর্মসূচিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে র্যালিটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী একসাথে মিলেমিশে উৎসবমুখরভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
র্যালি শুরুর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুস্পঅর্পন করা হয়। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ কলেজের মূল ভবনের সামনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথির ব্যক্তব্যে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন,ঢাকা কলেজ সবসময় আমার আবেগের জায়গা। আমি দীর্ঘদিন ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলাম । আজকে ঢাকা কলেজের জন্মদিন। সকল বিভাগের শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের প্রথম সরকারী কলেজ। ঢাকা কলেজ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়িত। আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা কলেজের আত্নত্যাগের ফসল। ১৮৪১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের একনম্বর কলেজ। আশা করি, ঢাকা কলেজ সবসময় সারাদেশের মধ্যে একনম্বরেই থাকবে। ভবিষ্যতে ঢাকা কলেজের ছেলেরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available