নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়ক ও মহাসড়কে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ি থেকে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের সময় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩২ জন চাঁদাবাজকে বিভিন্ন আলামতসহ আটক করেছে র্যাব-১।
৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মুসতাক আহমদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দেশের সকল শ্রেণির নাগরিকগণ বাজার করতে গিয়ে দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা সবজি বাজারে পাইকারি এবং খুচরা সবজির মূল্যের তারতম্য দেখা যায়। পণ্য উৎপাদনের স্থান থেকে পাইকারি বাজারে পরিবহনের সময় সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ধাপে ধাপে চাঁদা দেয়ার কারণে পাইকারি বাজারে এসে বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
কিছু কিছু স্থানে র্যাব ও ভোক্তা অধিকারের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীতে আবার পূর্বের মত উচ্চ মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগের বিষয়সহ পণ্যবাহী পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ায় দেশব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। উক্ত জনদুর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীসহ সারাদেশে র্যাবের বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা দল তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পাইকারি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের চাঁদাবাজির তথ্য উদঘাটনের জন্য কাজ শুরু করে। সেইসাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদনকারীদের পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ পূর্বক ট্রাক/পণ্যবাহী যানবাহনে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পৌঁছানোর সময় পথিমধ্যে নামে বে-নামে ভূয়া রশিদ অথবা কখনো কৌশলে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদাবাজি করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় মাঝরাতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১, উত্তরা। অভিযানে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজ চক্রের সক্রিয় সদস্য মো. রাকিব হাসান রাব্বি (২০), মো. টুটুল ইসলাম (১৯), ইমন (১৮), মো. ইফসুফ (২২), মো. জোনায়েত (১৯), মো. সিয়াম (১৮), মো. হাবিবুল্লাহ (৩৫), মো. জিহাদুর রহমান (২৪), মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (২৪), মো. আকাশ মিয়া (২৬), মো. নান্নু হোসেন (২৭), মো. মাসুদ (৪০), মো. রাজীব সরকার (৩২), মো. জাকির হোসেন (৪১), মো. আমজাদ হোসেনসহ (৫৫) মোট ৩২ জনকে আটক করা হয়।
এ সময় আটকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের নগদ ১ লক্ষ ২ হাজার ৮৬৫ টাকা, ৬টি টর্চলাইট, ৩টি টার্গেট লাইন, ১টি চার্জার লাইট, ২৯টি চাঁদা আদায়ের রশিদ, ৪টি রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, ২টি লাঠি, ২৫টি মোবাইল ফোন ও ১টি হেডফোন উদ্ধার করা হয়।
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে প্রতিরাতে বর্ণিত স্থানগুলোতে রাস্তার উপর অবস্থান করে। পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের সময় তারা রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের কাছে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে থাকে। আর কোনো ড্রাইভাররা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাংচুর, ড্রাইভার-হেলপারকে মারধরসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। তারা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন থেকে বিভিন্ন কৌশল ও অজুহাতে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। বিশেষ করে মধ্য রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে সে সময় সড়কে এমন চিত্র শুরু হয়। প্রতি রাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে বলে জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে পণ্য মজুদ করে কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে র্যাব ফোর্সেসের নির্দেশনাক্রমে র্যাব-১ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available