মুজাহিদ: চলছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। মেলার সময় ইতোমধ্যে পেরিয়েছে প্রায় অর্ধ মাস। বইমেলা প্রাঙ্গন জুড়ে এখন মানুষের সমাগম আর পদাচারণায় মুখর হলেও ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের বই কেনার প্রতি আগ্রহ কম। বরং ছবি তোলা আর ফটোসেশানে তারা অধিক সময় ব্যস্ত তারা।
অনেক দর্শনার্থীর মতে, বইয়ের দামের ঊর্ধ্বগতি ও অনলাইন নির্ভরশীলতা মানুষকে ক্রমেই বই থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রকাশকের মতে, এক শ্রেণির মানুষ আছে তারা মেলাতে আসে ছবি তুলতে আর ফটোসেশান করতে। আর কিছু জেনুইন পাঠক আছে তারা আসছে এবং পছন্দমত লেখকের বই সংগ্রহ করছে। তবে এই পরিমাণটা কম, না কেনার সংখ্যাটাই ভারি।
আগামী প্রকাশনীর ইনচার্জ আমিরুল ইসলাম বলেন, 'মানুষ বইমেলাতে আসছে প্রচুর তবে তাদের বই কেনার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখছি না। বই পড়া বা কেনার প্রতি তাদের কোন চাহিদা দেখা যাচ্ছে না। তারা আসছে ঘুরতে, ছবি তুলতে, কফি খেতে কিন্তু বইমেলাতে আসার মূল যে উদ্দেশ্য বই কেনা সেটা দেখতে পাচ্ছি না।'
জার্নিম্যান বুকসের নির্বাহী পরিচালক ও লেখিকা নাজনীন হক বলেন, 'নতুন প্রজন্ম সবাই সেলফিতে বা ছবি তুলতে ব্যস্ত। তারা সবাই বই নিয়ে ছবি তুলছে, বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি তুলছে এবং সেগুলো পোস্ট করছে। তারা এটাও জানে না, এটি কোন বই, কোন প্রকাশনার বই বা কী নাম বইয়ের। তারা বই কিনতে না পারলে এখানে কোন কাউন্টারে দাঁড়িয়ে যদি আধাঘণ্টা পড়ে এবং সে সম্পর্কে দু'লাইন জ্ঞান নিয়ে সেটা লিখে তাহলেও কেউ কিছু বলবে না, কিন্তু এমন মনোভাবও তাদের মাঝে নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'সরকার অনেক কষ্ট করে মেট্রোরেল চালু করেছেন। এ কারণে এবার বইমেলাতে মানুষের অনেক পাদচারণা। এ বিষয়কে মাথায় রেখে প্রতিটি স্টল-প্যাভিলিয়ন তাদের প্রকাশনাকে অনেক সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন। কিন্তু সে হিসেবে বই কিনাতে সাড়া কম। কিছু কিছু অরিজিনাল পাঠক আছেন তারা আসছেন এবং অল্প অল্প করে বই সংগ্রহ করছেন তবে সে রকম আশাপ্রদ বিক্রি না বলেও জানান তিনি।
বই ও কাগজের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, 'কাগজের দাম অত্যাধিক বাড়ায় আমাদের খরচও বেশি হয়েছে। আমরা আগে যে দামে কাগজ কিনতাম এখন সেটার তিনগুণ দামে রিং প্রতি কিনতে হয়। এতে করে আমাদের বই ছাপানোর খরচও বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ায় ব্যবস্থাপনায়ও আমাদের অনেক খরচ হয়েছে। সেই তুলনায় তেমন আশাপ্রদ বিক্রি নেই।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের দৃষ্টিআকর্ষণ করে এই প্রকাশক বলেন, 'আমাদের অনুরোধ থাকবে, আপনারা যারা শিক্ষক অভিভাবক আছেন আপনাদের সন্তানরা তো বইমেলাতে আসছে, সেজেগুজে এসে দামি ফোন ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলেছে, মোবাইলে মেগাবাইট কিনে সেটা পোস্টও করছে। এখানেও তো মেগাবাইট কিনতে টাকা খরচ করতে হয়। ১০০, ২০০, ৩০০ টাকার প্রয়োজন হয়। এই টাকা দিয়ে যদি একটা বই কিনে সন্তানরা পড়ে তবে তারা এই ডাটার তুলনায় ১০০ গুণ বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এ বিষয়ে আপনারা একটু সচেতন হবেন।'
অনিন্দ্য প্রকাশনীর প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, 'প্রতিবছরই মানুষ মাসের প্রথমঅর্ধ পর্যন্ত আসে ঘোরাঘুরি করে এবং চলে যায়। এরপর তারা চিন্তা করে কি বই কিনবে। এ বছরও প্রচুর মানুষ আসছে বই দেখছে। তবে আশা করছি এবারও মানুষ শেষের দিকে বই কিনবে।'
বইমেলাতে ঘুরতে আসা ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী সজিব হোসেন বলেন, 'বই মেলায় যারা আসছে তাদের মধ্যে দর্শনার্থীদের সংখ্যাই বেশি। তারা মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে দেখছে, আড্ডা দিচ্ছে, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ফটোসেশনে ব্যস্ত রয়েছেন। অনেক ছাত্রদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ থাকলেও বইয়ের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া বই ক্রয়ের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে এবার দুটি বই কিনেছি। যদি দামটা আরেকটু কম হত আমি আরো কয়েকটি বই নিতাম। কারণ স্টুডেন্ট হিসাবে উচ্চমূল্য দিয়ে বই কেনটা আমার জন্য কষ্টসাধ্য।'
আরিফুল ইসলাম নামে ঢাকা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'বই কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহটা অনেকাংশে কম গেছে। এখানে আসলে কিছু কারণ আছে, যেমন মানুষ এখন অনলাইনে, ফেসবুক, ইউটিউবে দীর্ঘ সময় ব্যস্ত থাকেন। আগেকার মানুষ অবসরে বই পড়তো, এখন তেমনটি দেখা যায় না। তবে বইয়ের দাম পারিপার্শ্বিক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বোগতির দিকে বিবেচনায় আমার কাছে ঠিকই মনে হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান যুগের মানুষ অনলাইনে অধিক পরিমাণে আসক্ত। তারই প্রতিফলন হিসেবে বইমেলায় ছবি তুলছে, টিকটক ভিডিও বানাচ্ছে, ফেসবুকের জন্য রিলস করছে। এরা মুলত অনলাইন মুখী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পরেছেন।'
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available