নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান মোল্লার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-ছাত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা।
৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারটার দিকে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর অবস্থিত কলেজ মাঠে দাঁড়িয়ে এই বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। এসময় প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে প্রিন্সিপাল হাফিজুর রহমান মোল্লার পদত্যাগের দাবিতে মাইকে স্লোগান দেয়।
জানা যায়, মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের এক রিট পিটিশন রুলের ‘স্থিতাবস্থা’ লঙ্ঘন করে গেল সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখ তালা ভেঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন হাফিজুর রহমান। এর আগে গভর্নিং বডি কর্তৃক ২০২২ সালে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে চেয়ারে বসেন তিনি। এ ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওই অধ্যক্ষ আদালতের স্থিতাবস্থা গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের তালা ভেঙ্গে অফিস কক্ষে প্রবেশ করায় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নথি নিরাপদ মনে করছেন না শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেকেই। এছাড়াও সাময়িক বরখাস্ত হওয়া হাফিজুরের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক ‘স্থিতাবস্থা’ জারি থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ২২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী ব্যাংক থেকে বেতন তুলতে পারছেন না।
এ বিষয়ে উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রিন্সিপাল হাফিজুর রহমান আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর আফসার খানকে ধরে ২০১৯ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তার নিয়োগটাই বিতর্কিত ছিল। এসব বাদেও তার নামে আদালতের ‘স্থিতাবস্থা’ থাকায় তার স্বাক্ষরে আমরা শিক্ষক-কর্মচারী কেউই বেতন নিতে পারছি না।
তিনি জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে টেস্ট পরীক্ষাকে সামনে রেখে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের বেতন-পরীক্ষার ফিস কিছুই জমা দিতে পারছে না।
প্রিন্সিপালের স্বাক্ষর জটিলতায় গেল দু’মাসের বেতন না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে শিক্ষক সোনিয়া সুলতানা বলেন, হাফিজুর রহমান স্যার অবৈধভাবে চেয়ারে বসেছেন। তার কারণে দশ হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশুনা ঝুঁকিতে পড়েছে। আমরা শিক্ষকরা গেল দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। একজন অবৈধভাবে চেয়ারে বসে থাকবে আর এর জন্য আমরা কেন খেসারত দিব?
ক্ষোভ জানিয়ে ইংরেজি বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক কাউসার আহমেদ বলেন, আমরা চাই হাফিজুর রহমান মোল্ল্যা যদি আইনানুগভাবে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে পুনঃপ্রত্যাবর্তন করতে পারে তাহলে তাকে গ্রহণ করতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু, মহামান্য হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে আমরা ১ ঘণ্টার জন্যও তার নির্দেশনায় দায়িত্ব পালন করাকে আইন ও নৈতিকতাপূর্ণ মনে করছি না।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছে, হাফিজুর রহমান মোল্লা অবৈধভাবে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসায় বিদ্যালয়ে প্রতিনিয়তিই সমস্যা হচ্ছে।
একাদশ শ্রেণির ছাত্র রিফাত জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের ওই আন্দোলন ছিল অনিয়ম, দুর্নীতি আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এখন যখন আমাদের কলেজেই দেখি অনিয়ম ফিরে এসেছে, তখন আমরা তা মেনে নিব না।
অপরদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান মোল্লার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল দিলে প্রতিবেদকের কলটি তার ছেলে পরিচয়ে একজন ধরে জানায়, এই নাম্বারটি এখন আমি ব্যবহার করি। আপনাকে আমি আব্বুর নাম্বারটি দিচ্ছি। পরে ছেলের দেয়া হাফিজুর রহমান মোল্লার ওই নাম্বারে কল দিলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available