নিজস্ব প্রতিবেদক: কিংবদন্তি ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর ভাষা আন্দোলন ও সার্বভৌমত্বের আন্দোলনে সবসময় সামনে থেকে দৃঢ়তার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যায়ের প্রশ্নে তিনি ছিল আপোসহীন। দেশের যেকোন ক্রান্তিকালে তাঁর মতো মানুষকে জাতি আজীবন স্মরণ করবে। তমদ্দুন মজলিসের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন করায় মামলা-হামলা-জুলুমসহ বহু নির্যাতনের শিকার হয়েও কখনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাথা নত করেননি।
১৮ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে মহান ভাষা আন্দোলনের সম্মুখ সারির সৈনিক প্রবীণ সাংবাদিক মরহুম অধ্যাপক আবদুল গফুরের জীবন ও কর্ম শীর্ষক সভা ও দোয়া মাহফিলে আগত বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
বক্তারা আরও বলেন, অধ্যাপক আবদুল গফুরের মৃত্যুতে জাতির এমন ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তার জীবন যাপন ছিল খুবই সাদাসিদে। সদা হাস্যোজ্বল আবদুল গফুর কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলতেন না। রব্বানী দর্শনের আদর্শ পালন করা আবদুল গফুর সারাজীবন বাঙালি জাতির মানুষের অন্তরে থেকে যাবে যুগ যুগ ধরে।
তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক ডিজি আ. জ. ম. শামসুল আলম, সাবেক কূটনীতিক ড. মসউদ মান্নান, বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সোনারগাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক, দৈনিক ইনকিলাবের সহ. সম্পাদক জামাল উদ্দীন বারী, সৈয়দ ইবনে রহমত, মাহমুদ বিন কাসেম, কবি শাহ সিদদিক, আশরাফুল ইসলাম, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, মোস্তফা মাসুম তৌফিক প্রমুখ। দোয়া পরিচালনা তমদ্দুন মজলিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব) জামিল আহমেদ।।
এ ছাড়াও দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, লেখক-সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ-রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীগণ আলোচনায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের কিংবদন্তি ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর ১৯২৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ির দাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর সাত মাস।
১৯৪৫ সালে স্থানীয় মইজুদ্দিন হাই মাদরাসা থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৪৭ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশগ্রহণ তিনি। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক হিসেবে কাজ করে আমৃত্যু অভিভাবক পরিষদের সভাপতি হিসেবে কাজ করে গেছেন। আন্দোলনের মুখপত্র সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পেশাজীবনে এই ভাষা দৈনিক ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুমের (ইসলামিক একাডেমি) সুপারিনটেনডে হিসেবে কাজ করেছেন। পরে তিনি এক বছর চট্টগ্রামে জেলা যুবকল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আবুজর গিফারী কাজে শিক্ষকতা করেন। মরহুম আবদুল গফুর ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা পরিচালক ছিলেন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবের ফিচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ তাকে ২০০৫ সালে একুশে পদক প্রদান করে। অত্যন্ত সাদা মনের গুণী মানুষ অধ্যাপক আবদুল তিনি দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক আজাদ, দৈনিক দেশ, দৈনিক ইনকিলাব, ইংরেজী দৈনিক শিপন, দৈনিক নাস্তার প্রভৃতি পত্রিকার কাজ করেছেন। তাঁর লেখা ইতিহাস ভিত্তিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available